Madhyamik Bengali Rachona Somogro Suggestion 2022 | মাধ্যমিক বাংলা রচনা সমগ্র সাজেশন ২০২২

 

মাধ্যমিক বাংলা রচনা সমগ্র সাজেশন ২০২২
মাধ্যমিক বাংলা রচনা সমগ্র সাজেশন ২০২২ 

Madhyamik Bengali Rachona Somogro Suggestion 2022

WBBSE Madhyamik Rochona Suggestion 

Class 10 Bangla Rachana 

মাধ্যমিক বাংলা রচনা সমগ্র সাজেশন ২০২২ 


বাংলার উৎসব 


ভূমিকা –   বাঙালি উৎসব প্রিয় জাতি । বাংলার বারো মাসে তেরো পার্বণ, তাই কবি ঈশ্বর গুপ্ত রঙ্গ করে বলেছেন-- "এত ভঙ্গ বঙ্গদেশ তবু রঙ্গে ভরা" । প্রতিদিনের জীবনযাত্রার একঘেয়েমি কষ্ট ও যন্ত্রণা থেকে সাময়িক মুক্তি দেয় এই উৎসব।  উৎসব মানুষের মধ্যে মিলন ঘটায়।  সমস্ত দ্বিধা-দ্বন্দ্ব  ভুলে মানুষ একই অঙ্গনে সমবেত হয় উৎসবের আনন্দ ভাগ করে নিতে।  তাই উৎসব এর তাৎপর্য সীমাহীন।

উৎসবের প্রকারভেদ- বাংলা তথা ভারতবর্ষ চিরকালই বিধাতার আশীর্বাদে ধন্য। এখানে রয়েছে বিভিন্ন জাতি ও ধর্মের বাস। এই বৈচিত্র্যের মধ্যেও রয়েছে ঐক্য। এই বৈচিত্র্যের উপর ভিত্তি করে বাংলার উৎসবকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয় যেমন- জাতীয় উৎসব, সামাজিক উৎসব, ধর্মীয় উৎসব, লোক উৎসব বা ঋতু উৎসব ইত্যাদি।

 জাতীয় উৎসব- বাঙালিরা জাতীয় উৎসব পালনের মাধ্যমে নিজ জাতীয় সংহতি ও ঐক্যকে তুলে ধরার চেষ্টা করে। বাঙালিরা যে সমস্ত জাতীয় উৎসব পালন করে সেগুলি হল ১৫ ই আগস্ট স্বাধীনতা উৎসব, ২৬ শে জানুয়ারী প্রজাতন্ত্র দিবস, গান্ধীজীর জন্ম দিবস, নেতাজির জন্ম দিবস, বিবেকানন্দের জন্ম দিবস,নজরুল জয়ন্তী,রবীন্দ্র জয়ন্তী ইত্যাদি।

 সামাজিক উৎসব- বাঙালিরা সমাজ প্রিয় ও ঘরকুনো জাতি তারা সামাজিক উৎসব পালনের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে মিলন ও আদান প্রদানের সীমাকে বৃদ্ধি করে তোলে। বাঙালিরা যে সমস্ত সামাজিক উৎসব পালন করে থাকে,  তা হল -বিবাহ, অন্নপ্রাশন, জন্মদিন, জামাইষষ্ঠী, ভাইফোঁটা ইত্যাদি।

 ধর্মীয় উৎসব - বাংলায় বিভিন্ন ধর্মালম্বী মানুষদের বাস । ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের দিক থেকে তাদের উৎসবেরও বৈচিত্র্য দেখা যায়। বাঙালি মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব গুলি হল-  ঈদ-উল-ফিতর, ঈদ- উল- আযহা, মহররম, সবেবরাত, ঈদে মিলাদুন্নবি,সবে মেরাজ ইত্যাদি। বাঙালি হিন্দুদের শ্রেষ্ঠ ধর্মীয় উৎসবগুলি হল- দুর্গাপূজা, সরস্বতীপুজো,জন্মাষ্টমী, কালীপুজো, বিশ্বকর্মা পুজো,শিবরাত্রি  ইত্যাদি। খ্রিষ্টানদের-  বড়দিন ও গুড ফ্রাইডে, বৌদ্ধদের বুদ্ধ পূর্ণিমা এবং শিখদের গুরু নানকের জন্মদিন।

 লোক উৎসব তথা ঋতু উৎসব - বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। প্রত্যেক ঋতুতে কোনো না কোনো উৎসব লেগেই আছে। পহেলা বৈশাখ শুভ নববর্ষ, বর্ষাকালে বর্ষামঙ্গল উৎসব, অগ্রহায়ন মাসে নতুন ধানের সময় নবান্ন উৎসব খুব ধুমধামের সহিত পালন হয়। এছাড়া বাঙালিরা যে সমস্ত লোক উৎসব পালন করে থাকে তা হল- ভাদু, টুসু ইত্যাদি।

উপসংহার- অতীতে উৎসবের মধ্যে যে আনন্দ ও কল্যাণ নিহিত ছিল আজ তা নিষ্প্রাণ। এখন রয়েছে চাঁদা তোলার হিড়িক ও লাউড স্পিকারের যন্ত্রণা,পোশাক ও অলংকারের আড়ম্বরই আজ প্রকট । উৎসবের গুরুত্ব ও অর্থ আজ কমে গেছে,কমে গেছে আনন্দ উপভোগ ও বিনিময়। 

পরিশেষে এই আশাই কামনা করি উৎসবের সত্য আনন্দ ও গুরুত্ব যেন ফিরে আসে বাঙালির প্রতিটি ঘরে ঘরে, প্রতিটি গ্রাম বাংলার মাঠ ঘাট,আকাশ বাতাস যেন মুখরিত হয়ে ওঠে উৎসবের আনন্দে। 



বিজ্ঞান ও কুসংস্কার

ভূমিকাঃ   ঐতিহাসিক যুগে মানুষ ছিল প্রকৃতি নির্ভর। প্রকৃতির ঝড়- ঝঞ্ঝা, বন্যা ও ক্ষরায় এবং ভূমিকম্পের বিধবংসী আলোড়নে মানবজীবন প্রতি পদে  বিপর্যস্ত হয়েছে। চন্দ্রগ্রহণ, সূর্যগ্রহন ইত্যাদি কিছুকে সে দৈব নির্ভর বলে মনে করেছে । আর দৈনন্দিন জীবনে যা কিছু ভালো- মন্দ ঘটেছে সব কিছুর পিছনে দেব-দেবীর কোপ বলে মনে করেছে। 

কুসংস্কার কিঃ  যে বিশ্বাসের পিছনে কোন যুক্তি নেই, কোন বিজ্ঞান নির্ভর তথ্য প্রমাণ নেই , তাকেই আমরা কুসংস্কার বলি। অর্থাৎ যুক্তি-তর্কহীন  অন্ধবিশ্বাসই হল কুসংস্কার।

বিজ্ঞানের স্বরুপঃ বিজ্ঞান কথাটির অর্থ হল বিশেষ জ্ঞান। কোনো কিছু অজানা বিষয়কে যুক্তি তর্কের সাহায্যে গ্রহণ করাই হল বিজ্ঞান। এখানে আছে শুধু বিচার-বিবেচনা, যুক্তি তর্ক ও যাচাইয়ের সাহায্যে গ্রহণ।

কুসংস্কারের বিভিন্ন প্রকাশঃ একবিংশ শতাব্দীর কম্পিউটার, রোবট এর আধুনিক যুগে শিক্ষিত মানুষের মনেও কু-সংস্কার অতপ্রেতভাবে জড়িত । ভোরের স্বপ্ন বিফল হয় না, মেয়েদের বাম চোখ নাচা শুভ, ডান চোখ নাচা অপয়া,পিছু ডাকা অমঙ্গল,বিড়াল রাস্তা কাটলে অমঙ্গল ইত্যাদি।  এইরকম হাজারো  কুসংস্কার আমাদের প্রতিদিনের জীবনে দেখা যায়। 

কুসংস্কারে আস্থার কারণঃ বিজ্ঞানের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। পরীক্ষার্থীর ভাল মার্কস করে দিতে পারে না, বন্ধ্যা নারীর সন্তান হবে কিনা বিজ্ঞান বলতে পারে না, খেলায় কোন পক্ষ জয়ী হবে তাও বলতে পারে না।  আর সেখানেই কুসংস্কারের শুরু । জয় হয় ওঝা, কবিরাজের। মানুষ বিশ্বাস করতে থাকে দৈব শক্তির উপর। কিন্তু কুসংস্কারের প্রভাবে মানুষ শুধু ভাগ্ আশাবাদী  হয়। কোন কর্ম না করে শুধুমাত্র সৌভাগ্যের অপেক্ষা করা মানুষের পক্ষে ক্ষতিকর ও মুর্খামি । তাই কর্ম করে যেতে হবে নিষ্ঠার সঙ্গে ।  কর্ম ও ভাগ্যের সমন্বয়ে সফলতা আসে।

কুসংস্কার দূরীকরণে করণীয়ঃ একমাত্র বিজ্ঞানই কুসংস্কার দূর করতে পারে। মানুষের মধ্যে বিজ্ঞান মনস্কতা বৃদ্ধি করতে হবে। এজন্য বিজ্ঞান মঞ্চ, বিতর্ক সভা, বিভিন্ন শিক্ষা মুলক প্রদর্শনী গড়ে তুলতে হবে। মানুষের অন্তরে যুক্তিতর্ক ও জ্ঞানের আলো প্রবেশ করাতে হবে। 

উপসংহারঃ কুসংস্কার দূর করতে মানুষের অন্তরে শিক্ষার বীজ বপন করতে হবে। জাতিকে শিক্ষিত করে তুলতে আমাদেরকে সচেষ্ট থাকতে হবে। মানুষকে বোঝাতে হবে রোগ দূর করতে একমাত্র ডাক্তারের উপর ভরসা করতে হবে। ওঝা বা কবিরাজের উপর নয়। এই সমস্ত কুসংস্কারের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে জাতি ও দেশ উন্নত হবে না। তাই আমাদের উচিত কুসংস্কার ত্যাগ করা। 


করোনা ভাইরাস 

ভূমিকাঃ সৃষ্টির ঊষাকাল থেকে মানুষ নিজের প্রচেষ্টা ও বুদ্ধিকে কাজে  লাগিয়ে সভ্যতাকে উন্নতির চুড়ায় পৌঁছে দিয়েছে । বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বলে বলীয়ান হয়ে জল ,স্থল ও অন্তরীক্ষে তার আধিপত্য বজায় রেখেছে। মানুষ যত তার সীমা বৃদ্ধি করেছে ততই নতুন বাধার সম্মুখীন হয়েছে। পৃথিবীকে নিজ মুষ্টিতে করায়ত্ত করতে গিয়ে সৃষ্টির উগ্র রূপও দর্শন করতে হয়েছে মানব সভ্যতাকে । কখনো খরা,বন্যা, ভুমিকম্প কখনো বা মহামারীর করাল থাবা উলট পালট করেছে সুন্দর সৃষ্টিকে। সাম্প্রতিক এমনই এক মহামারী যা একবিংশ শতাব্দীকে তিন বছরের জন্য স্তব্ধ করে দিয়েছে সমগ্র দিক থেকে । সেই অতিমারি মহামারীর নাম করোনা ভাইরাস। 

মহামারী কি?  মানুষ তথা বিভিন্ন প্রাণী বা উদ্ভিদের মধ্যে রোগ-জরা লেগেই আছে । এমন কিছু রোগ দেখা দিয়েছে যার কারনে গ্রামের পর গ্রাম, শহর ,নগর উজাড় হয়ে গেছে । তখন আমরা বলি  মহামারী বা অতিমারী দেখা দিয়েছে। যখন কোনো রোগ স্বল্প সময়ের জন্য  বিপুল সংখ্যক মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, তখন তাকে মহামারী বলে ।আর কোনো রোগ যখন দেশ বা দেশের গণ্ডী অতিক্রম করে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, তাকে বলে অতিমারী। ২০২০ সালে করোনা যখন চীনের সীমানা ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ল, তখন তা অতিমারীর আকার  নিল। বর্তমানে করোনা অতিমারি রোগ। 

মহামারীর ইতিহাসঃ  বিশ্ব জুড়ে মহামারীর ইতিহাস বেদনাদায়ক। কখনো কলেরা,কখনো প্লেগ, কখনো ব বার্ড ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু। আর বর্তমানে  শীর্ষ তালিকায় সংযোজিত হয়েছে করোনা ভাইরাস। এই মহামারীর প্রকোপ প্রান কেড়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষের।  

করোনা ভাইরাসের উৎসঃ করোনা ভাইরাসের উৎস সম্পর্কে  পৃথিবী জুড়ে রয়েছে বিতর্ক। কারো মতে ইহা কৃত্রিম উপায়ে গবেষণাগারে তৈরি, কেউ মনে করে এই ভাইরাসের উৎস হলো বাদুড়।  বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার বক্তব্য অনুসারে এই ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয় চীন দেশের হুনান প্রদেশের রাজধানী উহান শহর  থেকে। সেখান থেকেই এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ে আজ বিশ্ব মহামারী রুপ ধারণ করেছে।

নামকরণঃ  প্রথমেই বলে রাখা দরকার যে করোনা এবং ভাইরাস দুটি শব্দই লাতিন ভাষা থেকে নেওয়া হয়েছে । করোনা শব্দের অর্থ মুকুট এবং ভাইরাস বলতে বোঝায় 'বিষ'। ভাইরাসটির নাম করোনা হওয়ার কারণ হল এর আকৃতি। ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ-এ দেখা গেছে এই ভাইরাসটি শরীরজুড়ে খাজকাটা অসংখ্য কাঁটার মতো, আপাতভাবে একটি রাজমুকুটের মতো । এই ভাইরাসটি অন্যান্য ভাইরাসের  তুলনায় আয়তনে বেশ বড়। 

করোনা'র চরিত্র বিশ্লেষণঃ 

 করোনা ভাইরাস দুনিয়ায় নতুন নয়। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম মানুষের শরীরে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এরপর থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত মানুষের শরীরে  প্রায় পাঁচ প্রকারের করোনা ভাইরাস আবিষ্কৃত হয়। তবে আজকের করোনা ভাইরাস পুরনো করোনা ভাইরাস থেকেঅনেকাংশে ভিন্ন । যার ফলে প্রথম থেকে একে চিহ্নিত করা হচ্ছে নোভেল করোনা ভাইরাস নামে। ২০১৯ সালের শেষে চীনে এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা যায়। মিউকাস এর মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে এই ভাইরাসট বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আক্রমণ করে। এক্ষেত্রেও আঘাত করে  মানুষের শ্বাসযন্ত্র। এই ভাইরাসটী ছোঁয়াচে প্রকৃতির । এই ভাইরাস রোগটিকে বিশেষজ্ঞরা চিহ্নিত করেছেন কোভিড-১৯ নামে। যার পুরো কথা হল Corona Virus Disease 19 বা COVID-19.

সংক্রমন

এই ভাইরাসটির সংক্রমন বিশেষজ্ঞদের মতে চারটি পর্যায়ে ঘটে । প্রথমটি হল,  যারা বিশেষভাবে সংক্রমিত অঞ্চল থেকে সরাসরি সংক্রমিত হয়ে এসেছে। দ্বিতীয় পর্যায়টি হল, যেখানে সরাসরিভাবে সংক্রমিত হওয়া সেই সব মানুষ গুলি নিজেদের সংস্পর্শে আসা অন্যান্য মানুষদের শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটায়। তৃতীয় পর্যায়ে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে এক বৃহত্তর অঞ্চল জুড়ে। এই পর্যায়ে সংক্রমিত ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শে না আসা ব্যক্তিও তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকে সংক্রমিত হয়।  চতুর্থ পর্যায়ে সংক্রমণ রাজ্য কিংবা দেশজুড়ে এক মহামারীর আকার ধারণ করে। তখন  ভ্যাকসিন ছাড়া তাকে রোধ করা প্রায় অসম্ভব।

চিকিৎসাঃ 

করোনায় আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাব। এই রোগের উপসর্গগুলি হল  গলা ব্যথা, জ্বর, শ্বাসকষ্ট । এই রোগের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই । এইজন্য ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি গড়ে তোলা উচিত।

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাঃ 


এর নির্দিষ্ট চিকিৎসা না থাকায় উপসর্গ অনুযায়ী এর চিকিৎসা হয়ে থাকে। এর  থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হল ভ্যাক্সিনেশন বা টিকাকরণ। বিশেষজ্ঞদের মতে এর  প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা বলতে সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার প্রথাকে বোঝানো হয়। এই নিয়মের পালনের জন্যই বিভিন্ন দেশ জারি  করে লকডাউন। তাছাড়া বিশেষ ধরনের মাস্কের ব্যবহার এবং হাত পরিষ্কার রাখার জন্য স্যানিটাইজার তথা সাবান ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। 

টিকাকরণঃ

দীর্ঘ গবেষণার পর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারে সক্ষম হয়েছে। সর্বপ্রথম যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল দীর্ঘ গবেষণার পর করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কার করে। এর পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,রাশিয়া ও চীন নিজের দেশে ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করে দেয়। রাশিয়াতে সর্বপ্রথম এই ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন রাশিয়ার রাষ্ট্রপতির কন্যা। আমাদের দেশও ভ্যাকসিন আবিষ্কার এবং তার প্রয়োগ শুরু করে দিয়েছে। ভারতের দুটি সংস্থা: সিরাম ইনস্টিটিউট এবং ভারত বায়োটেক দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর  দুটি ভ্যাকসিন নিয়ে আসে।  একটির নাম হলো কোভিশিল্ড এবং অপরটি কোভ্যাক্সিন। প্রথমে পরীক্ষামুলকভাবে এর প্রয়োগ শুরু হয় এবং ট্রায়ালের পর্যায় সফলভাবে শেষ হবার পর ধাপে ধাপে ব্যাপকহারে জনমানসে টিকাকরণ শুরু হয় ।

 করোনার  প্রত্যক্ষ প্রভাবঃ 

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রত্যক্ষ  প্রভাব সুদূরপ্রসারি।  আমরা প্রতিদিন দেখতে পাচ্ছি চোখের সামনে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। ঘন জনবসতি অঞ্চলে আক্রান্তের হার  বেশি। এই আক্রান্ত মানুষদের মধ্যে হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন প্রান ত্যাগ করছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খবর আসছে মানুষ মারা যাচ্ছেন বিনা চিকিৎসায়।

পরোক্ষ প্রভাবঃ 

 প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লকডাউন এর ফলে  ছোট-বড়ো-মাঝারি বিভিন্ন ধরনের শিল্প অস্তিত্বসংকটের সম্মুখীন।  এগুলির সাথে যুক্ত অসংখ্য মানুষ তাদের জীবিকাও হারিয়েছে। বেড়েছে বেকারত্তের সংখ্যা। বিশ্ব অর্থনীতি পড়েছে সংকটের মুখে। সমাজের বুকে থাবা বসাচ্ছে দারিদ্র, অনাহার, খাদ্যাভাব। মাস্ক বা স্যানিটাইজারের মত প্রতিরোধমূলক উপকরণগুলোতে শুরু হয়েছে দুর্নীতি। বেড়েছে কালোবাজারি । 

উপসংহার ঃ 

কথায় বলে, সভ্যতা যখন নিজের গতিকে অপ্রতিরোধ্য বলে মনে করে, সৃষ্টি তখন সমগ্র সভ্যতাকে ক্ষণিকের জন্য থামিয়ে দেয়। একটি ক্ষুদ্র ভাইরাস যেন আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে এই  সত্যতাই প্রমাণ করে দিল।  আমরা সৃষ্টির কাছে কতখানি অসহায় তা আবারো প্রমান হল । তবে মানুষের এই অসহায়তায় প্রকৃতি বিশ্বজুড়ে দূষণকে কমিয়ে বায়ুকে  বিশুদ্ধ করে তুলেছে ধীরে ধীরে। লকডাউনে শুনশান হাইওয়েতে বন্য নীলগাইয়ের চরে বেড়ানো আমাদের মুগ্ধ করেছে।  তবে একথা সত্যি যে এই দুর্যোগের মেঘ কাটিয়ে উঠে আমরা  আবার সুস্থ পৃথিবীতে শ্বাস নিতে পারব। আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে সৃষ্টির সাথে তাল মিলিয়ে সভ্যতার জীবনযাপনেই জীবনের প্রকৃত সার্থকতা।

কন্যাশ্রী প্রকল্প

 “আমরা তো জানি পৃথিবী রমণী আকাশ আদিম/পুরুষ

তবে কেন তুমি আমার দুহাতে শেকল পরিয়ে/রেখেছ?

হাজার বছর ধরে কেন তুমি সূর্য দেখতে দাওনি?” –মল্লিকা সেনগুপ্ত 

ভূমিকা: গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার মূল লক্ষ্যই হল প্রজাকল্যাণসাধন। সমাজে আর্থিক বৈষম্য দূর করা, শিক্ষা এবং খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের অধিকারকে নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সরকারের পরিকল্পনা তৈরি হয় এইসব উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই। ২০১৩ সালে প্রবর্তিত ‘কন্যাশ্রী প্রকল্প' এই উদ্দেশ্যসাধনে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।


প্রেক্ষাপট: কন্যাশ্রী প্রকল্পের প্রেক্ষাপটে রয়েছে সামাজিক বৈষম্য ও বনার এক করুণ ইতিহাস। ২০১১-র জনগণনায় দেখা গিয়েছে যে পশ্চিমবাংলায় বয়ঃসন্ধিকালীন মোট জনসংখ্যা ১ কোটি ৭৩ লক্ষ। এর মধ্যে ৪৮.১১ শতাংশই হচ্ছে মেয়ে। আবার পশ্চিমবাংলার মোট জনসংখ্যার ৯.৩ শতাংশ হচ্ছে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সি মেয়ে, আর ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সি মেয়েদের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ ৯.৫ শতাংশ। কিন্তু এই যে বিপুল নারীশক্তি, তাদের জীবনবিকাশের পথ কিন্তু একেবারেই মসৃণ নয়। দারিদ্র্য, অশিক্ষা, কুসংস্কার এবং লিঙ্গগত বৈষম্যের শিকার হয়ে এদের বিরাট অংশকে জীবন কাটাতে হয়, অনেকেই হারিয়ে যায় সমাজের অন্ধকারে। UNICEF-এর সমীক্ষায় শিশু বা অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বিয়ের নিরিখে ভারতের মধ্যে পশ্চিমবাংলার স্থান তৃতীয়। পরিসংখ্যান অনুসারে ১৮ বছরের কম বয়সি মেয়েদের মধ্যে ৫৪.৭ শতাংশই দ্রুত বিবাহের শিকার। গ্রামীণ এলাকায় সংখ্যাটা আরও বেশি— ৫৭.৯ শতাংশ। এই দ্রুতবিবাহের ফলে একদিকে যেমন এইসব মেয়েরা শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, তেমনি তারা নানারকম অপুষ্টির শিকার হয়, যা পরবর্তী প্রজন্মকেও প্রভাবিত করে। মেয়েদের এই দুর্দশা সামাজিক প্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অবস্থা কতটা শোচনীয় তা স্পষ্ট হয় যখন পরিসংখ্যানে দেখা যায় স্কুলছুটদের ৬৩.৫ শতাংশই হল মেয়ে। সমাজের দুর্বল, পিছিয়ে পড়া এবং হতাশার অন্ধকারে ডুবে যাওয়া এইসব মেয়েদের আলোর পথে ফিরিয়ে আনার জন্যই ২০১৩ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার চালু করে কন্যাশ্রী প্রকল্প, যার ঘোষিত উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়— "To reduce dropout rate and prevent early marriage"। প্রকল্পের রূপরেখা: ১০ থেকে ১৮ বছর বয়স এই সময়কালকে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা বলেছে মানুষের জীবনগঠনের কাল। কন্যাশ্রী প্রকল্পের ভাবনাও এই বয়সকে পরিচর্যা করার জন্যই। নারী এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রক জানিয়েছে যে, যে সব মেয়েদের পরিবারের বার্ষিক আয় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা বা তার কম, তারা বছরে ৫০০ টাকা করে আর্থিক সাহায্য পাবে এবং ১৮ বছর অবধি পড়া চালিয়ে গেলে ১৮ বছর বয়সে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরকার ২৫ হাজার টাকা প্রদান করবে। ২০১৫ সালের রাজ্য বাজেটে এই বৃত্তির পরিমাণ ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫০ টাকা করা হয়েছে। এই প্রকল্পের জন্য ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে যেখানে ২৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল ২০১৫-১৬ তে তা বেড়ে হয়েছে ৮৫০ কোটি। ভারতের মত উন্নয়নশীল দেশ, যেখানে দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাস করা মানুষের সংখ্যা আজও যথেষ্ট, সেখানে মেয়েদের সামাজিক সুরক্ষায় এই প্রকল্প যে যথেষ্ট কার্যকরী তা বলাই বাহুল্য। সরকারি তথ্য অনুসারে প্রায় ২২ লক্ষ মেয়ে ইতিমধ্যেই এর দ্বারা উপকৃত।


উপসংহার: কন্যাশ্রী প্রকল্প শুধু দেশের মধ্যে নয়, গোটা পৃথিবীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ২০১৪ সালে UNICEF-এর মেয়েদের জন্য অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে লন্ডনে রাজ্যকে কন্যাশ্রী প্রকল্প সম্পর্কে অবহিত করার জন্য আহ্বান জানানো হয়। এই সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে রাজ্যকে সরকার ১৪ আগস্ট দিনটিকে ‘কন্যাশ্রী দিবস’ রূপে ঘোষণা করেছে। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কন্যাশ্রী প্রকল্পকে ভবিষ্যতে পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত করার কথাও ঘোষণা করেছেন। প্রশাসনিক সদিচ্ছা আর সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়েই কন্যাশ্রীর মতো অসামান্য প্রকল্প আরও অর্থবহ হয়ে উঠতে পারে।

Newton Hossain

Newton Hossain, the founder of this blog, is a Lecturer of the English Language and also loves to explain Life science and Geography.

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post