পদ | পদ নির্ণয় | pod nirnoy | Bengali Grammar | Byakaron

পদ । পদ নির্ণয়
পদ । পদ নির্ণয়

সুপ্রিয় শিক্ষার্থীরা, আশা করি তোমরা সবাই ভালো আছো। আজ আমরা শিখবো এবং জানবো পদ সম্পর্কে। পদকে সহজতরভাবে শিখতে হলে আমাদের অবশ্যই পদকে বেসিক সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। তাই আমরা প্রত্যেক পদকে উদাহরণসহ শ্রেণীবিভাগ করে তোমাদের সামনে উপস্থাপন করতে চলেছি পদের ক্লাস। চলো তবে শুরু করি পদের বেসিক থেকে সম্পূর্ণ আলোচনা।
{tocify} $title={Table of Content}

পদ কী ?

শব্দের সঙ্গে বিভক্তি বা নির্দেশক যুক্ত হয়ে বাক্যে ব্যবহারের উপযোগী করাকে পদ বলে । অর্থাৎ শব্দের সঙ্গে বিভক্তি যোগ করেই পদ হয়।

বলতে আমরা কী বুঝি ?

কেবলমাত্র শব্দ দিয়ে বাক্য তৈরি হয় না শব্দের সঙ্গে কিছু বাড়তি চিহ্ন জুড়তে হয়। এই চিহ্নগুলি হল বিভক্তিসুতরাং পদ = শব্দ + বিভক্তি বিভক্তি যুক্ত না হলে কোনো শব্দ পদ হিসেবে গণ্য হয় না বাংলা ভাষায় কে, রে, র, এর, য়, তে প্রকৃতি ধ্বনি বিভক্তি হিসেবে  এবং টি, টা,  খানা,  খানি ইত্যাদি  ধ্বনিসমষ্টি  নির্দেশক হিসেবে শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পদ গঠন করে।

যেমন-  বইখানা = বই + খানা।

পদের প্রকারভেদ-

বাংলা ভাষায় প্রাথমিক পদকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়-

১) নাম পদ

২) ক্রিয়াপদ

নাম পদ কী ?

যেকোন নাম শব্দের সঙ্গে বিভক্তি ও নির্দেশক যুক্ত হয়ে তা বাক্যে ব্যবহৃত হলে তাকে নাম পদ বলে।

যেমন-আমি কলকাতাতে বাস করি।

এখানে কলকাতা নাম শব্দ-+তে বিভক্তি সমান বাড়িতে নাম পদ এই নাম পদ ।

ক্রিয়াপদ কী?

যে পদের দ্বারা কোনো কিছু হওয়া বা করা , খাওয়া, যাওয়া ইত্যাদি কোনো কাজ করা বোঝায়, তাকেই ক্রিয়াপদ বলে।

যেমন- ছেলেটি পড়ছে

মেয়েটি গান করল

সে ভাত খাচ্ছে

আমি বড়ো হব

এখানে – পড়ছে, করল, খাচ্ছে, হব---- ক্রিয়াপদ।

 নাম পদের প্রকারভেদ-

নাম পদ সাধারণত চার রকম যথা-

১) বিশেষ্য

২) সর্বনাম

৩) বিশেষণ

 ৪) অব্যয়

বিশেষ্য পদ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

কোন কিছুর নামকে বিশেষ্য পদ বলে ,অর্থাৎ যে পদের দ্বারা কোন ব্যাক্তি, বস্তু, জাতি, স্থান, কাল, ভাব, সমষ্টি, কাজ ইত্যাদির নাম বোঝায় তাকে বিশেষ্য পদ বলে।

যেমন

ঘরবাড়ি, বই, খাতা, যদু , গঙ্গা, রবীন্দ্রনাথ, পেনসিল, সোনা, শস্য, ছাগল, গরু,  ইত্যাদি।

বিশেষ্য পদের প্রকারভেদ-

বিশেষ্য পদ সাধারণত নয় রকম যথা-

১) সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য

২) শ্রেণিবাচক বা জাতিবাচক বিশেষ্য

৩) বস্তুবাচক বিশেষ্য

৪) সমষ্টিবাচক বিশেষ্য

৫) গুণবাচক বিশেষ্য

৬) সংখ্যাবাচক বিশেষ্য

৭) অবস্থাবাচক বিশেষ্য

৮) ভাববাচক বিশেষ্য

৯) ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য

সংজ্ঞাবাচক বা ব্যক্তিবাচক বিশেষ্য পদ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যে বিশেষ্য পদের দ্বারা বিভিন্ন ব্যক্তি, পাহাড়,পর্বত, নদী, সমুদ্র, দেশ, মন্দির, মসজিদ, গির্জা, গ্রন্থ ইত্যাদির নাম বোঝায় তাকে ব্যাক্তিবাচক বা সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য বলে

যেমন-

রবীন্দ্রনাথ বিশ্বকবি নামে পরিচিত।

এখানে -রবীন্দ্রনাথ - একজন ব্যক্তির নাম।

পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা

এখানেকলকাতা একটি জায়গার নাম

গঙ্গা একটি পবিত্র নদী

এখানে -গঙ্গা একটি নদীর নাম

 

এরূপ- বিবেকানন্দ, সুভাষচন্দ্র, দিল্লি, মুম্বাই, হিমালয়, মসজিদ, গির্জা, যমুনা ইত্যাদি

শ্রেণিবাচক বা জাতি বাচক বিশেষ্য পদ কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।

যে বিশেষ্য পদের দ্বারা কোন বস্তু বা প্রাণীর একটি কেউ না বুঝিয়ে ঐ বস্তু বা প্রানীর সমগ্র শ্রেণীকে বোঝায় তাকে শ্রেণিবাচক বা জাতিবাচক বিশেষ্য পদ বলে।

যেমন-

সবার উপরে মানুষ সত্য

সিংহ পশুদের রাজা

রাখাল মাঠে গরু চরায়।

এখানে মানুষ, সিংহ, গরু,--- জাতিবাচক বিশেষ্য পদ।

এরূপ বাঘ, খাতা, কলম, পর্বত, হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, সমুদ্র ইত্যাদি।

বস্তুবাচক বিশেষ্য পদ কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।

যে বিশেষ্য পদের দ্বারা কোন বস্তুর নাম বোঝায় তাকে বস্তুবাচক বিশেষ্য পদ বলে

যেমন-

 পিঁপড়েরা চিনির সন্ধানে ঘুরে চলেছে।

সোনা দিয়ে বিভিন্ন রকমের অলংকার তৈরি হয়

জলের অপর নাম জীবন।

এখানে চিনি, সোনা, জল, -------বস্তুবাচক বিশেষ্য পদ।

এরূপ কয়লা, লৌহ, কাগজ, পেট্রোল, রূপা, তামা, মাটি, সন্দেশ ইত্যাদি

সমষ্টিবাচক বিশেষ্য পদ কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।

যে বিশেষ্য পদের দ্বারা কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর সমষ্টির নাম নির্দেশ করে তাকে সমষ্টিবাচক বিশেষ্য পদ বলে

যেমন-

নীল আকাশে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি ওড়ে

এক পাল হরিণ নদীতে জল খাচ্ছে

ছেলেরা স্কুল থেকে দলে দলে ফিরছে ।

এখানে- ঝাঁকে ঝাঁকে, পাল, দলে দলে, ------সমষ্টিবাচক বিশেষ্য পদ।

এরূপ - ক্রিকেট দল, সৈনদল, পর্বতশ্রেণী, সমিতি, জনতা, শ্রেণী ইত্যাদি

সংখ্যাবাচক বিশেষ্য পদ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যে পদের দ্বারা কোন সংখ্যা বা সংখ্যাবাচক শব্দ বিশেষ্য রূপে ব্যবহৃত হলে তাকে সংখ্যাবাচক বিশেষ্য পদ বলে

যেমন-  আমাদের ক্লাসে একশো(১০০) জন ছাত্র-ছাত্রী আছে।

বর্তমানে রাম বাবুর বয়স আশি(৮০) বছর

এখানে – একশো জন, আশি বছর ------সংখ্যাবাচক বিশেষ্য পদ

এরূপ দশটা, কুড়ি বছর,  তিনখানা ইত্যাদি

গুণবাচক বিশেষ্য পদ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যে বিশেষ্য পদ প্রাণী বা বস্তুর দোষ গুণ ধর্ম প্রকৃতি বোঝায় তাকে গুণবাচক বিশেষ্য বলা হয়।

যেমন

ছেলেটির সাহস দেখে অবাক হতে হয়।

দয়া পরম ধর্ম

অহংকার পতনের কারণ

সততাই আমাদের একমাত্র মূলধন

এখানে-  সাহস,  দয়াই,  অহংকার,  সততাই------ গুণবাচক বিশেষ্য পদ

এরূপ - সুখ-দুঃখ, ক্ষমা, শ্রবণ, বিনয় ইত্যাদি

অবস্থাবাচক বিশেষ্য পদ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যে বিশেষ্য পদের দ্বারা প্রাণী বা বস্তুর অবস্থা বোঝায় তাকে অবস্থাবাচক বিশেষ্য পদ বলা হয়।

যেমন-

চাই বল চাই স্বাস্থ্য আনন্দ উজ্জ্বল পরমায়ু

সুখে থাকতে চাই সবাই

এখানে স্বাস্থ্য, সুখ --------অবস্থাবাচক বিশেষ্য পদ

এরূপ স্বাধীনতা,  শৈশব,  দারিদ্র, দুঃখবাদী  ইত্যাদি

ভাববাচক বিশেষ্য পদ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যে বিশেষ্য পদ প্রাণীর মনের কোন ভাব বা অবস্থাকে বুঝায় তাকে ভাববাচক বিশেষ্য পদ বলা হয়

যেমন-  আশা স্বপনের সমাধি

এখানে -সমাধি ভাববাচক বিশেষ্য পদ

এরূপ আনন্দ, বেদনা, উল্লাস ইত্যাদি।

ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য পদ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যে বিশেষ্য পদের দ্বারা কোনো কাজের নাম বোঝায় তাকে ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য পদ বলা হয়।

যেমন-

দরিদ্রকে দান করা উচিত

ছাত্রছাত্রীদের প্রধান কাজ হল অধ্যায়ন করা।

এখানে-  দান,  অধ্যায়ন ------ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য পদ

এরূপ লেখাপড়া,  যাওয়া, আসা,  ভজন,  পালন,  দর্শন, প্রাতঃভ্রমণ ইত্যাদি।

টেবিলের মাধ্যমে বিশেষ্য পদের প্রকারভেদ ও  উদাহরণ।

বিশেষ্য পদের প্রকারভেদ কাকে বলে ? উদাহরণ
১) সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য যে বিশেষ্য পদের দ্বারা বিভিন্ন ব্যক্তি, পাহাড়,পর্বত, নদী, সমুদ্র, দেশ, মন্দির, মসজিদ, গির্জা, গ্রন্থ ইত্যাদির নাম বোঝায় তাকে ব্যাক্তিবাচক বা সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য বলে। বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, সুভাষচন্দ্র, দিল্লি, মুম্বাই, হিমালয়, মসজিদ, গির্জা, গঙ্গা, কলকাতা, যমুনা ইত্যাদি।
২) শ্রেণিবাচক বা জাতি বাচক বিশেষ্য যে বিশেষ্য পদের দ্বারা কোন বস্তু বা প্রাণীর একটি কেউ না বুঝিয়ে ঐ বস্তু বা প্রানীর সমগ্র শ্রেণীকে বোঝায় তাকে শ্রেণিবাচক বা জাতিবাচক বিশেষ্য পদ বলে। মানুষ, সিংহ,গরু, বাঘ, খাতা, কলম, পর্বত, হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, সমুদ্র ইত্যাদি।
৩) বস্তুবাচক বিশেষ্য যে বিশেষ্য পদের দ্বারা কোন বস্তুর নাম বোঝায় তাকে বস্তুবাচক বিশেষ্য পদ বলে। চিনি, সোনা, জল, কয়লা, লৌহ, কাগজ, পেট্রোল, রূপা, তামা, মাটি, সন্দেশ ইত্যাদি।
৪) সমষ্টিবাচক বিশেষ্য যে বিশেষ্য পদের দ্বারা কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর সমষ্টির নাম নির্দেশ করে তাকে সমষ্টিবাচক বিশেষ্য পদ বলে। ঝাঁকে ঝাঁকে, পাল, দলে দলে, ক্রিকেট দল, সৈনদল, পর্বতশ্রেণী, সমিতি, জনতা, শ্রেণী ইত্যাদি।
৫) সংখ্যাবাচক বিশেষ্য যে পদের দ্বারা কোন সংখ্যা বা সংখ্যাবাচক শব্দ বিশেষ্য রূপে ব্যবহৃত হলে তাকে সংখ্যাবাচক বিশেষ্য পদ বলে। একশো জন, আশি বছর, দশটা, কুড়ি বছর, তিনখানা ইত্যাদি।
৬) গুণবাচক বিশেষ্য যে বিশেষ্য পদ প্রাণী বা বস্তুর দোষ গুণ ধর্ম প্রকৃতি বোঝায় তাকে গুণবাচক বিশেষ্য বলা হয়। সাহস, দয়াই, অহংকার, সততাই, সুখ-দুঃখ, ক্ষমা, শ্রবণ, বিনয় ইত্যাদি।
৭) অবস্থাবাচক বিশেষ্য যে বিশেষ্য পদের দ্বারা প্রাণী বা বস্তুর অবস্থা বোঝায় তাকে অবস্থাবাচক বিশেষ্য পদ বলা হয়। স্বাস্থ্য, সুখ, স্বাধীনতা, শৈশব, দারিদ্র, দুঃখবাদী ইত্যাদি।
৮) ভাববাচক বিশেষ্য যে বিশেষ্য পদ প্রাণীর মনের কোন ভাব বা অবস্থাকে বুঝায় তাকে ভাববাচক বিশেষ্য পদ বলা হয়। আনন্দ, বেদনা, উল্লাস, সমাধি ইত্যাদি।
৯) ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য যে বিশেষ্য পদের দ্বারা কোনো কাজের নাম বোঝায় তাকে ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য পদ বলা হয়। দান, অধ্যায়ন, লেখাপড়া, যাওয়া, আসা, ভজন, পালন, দর্শন, প্রাতঃভ্রমণ ইত্যাদি।

যদি পদ সম্পর্কে তোমাদের কোনো অসুবিধা থাকে, তাহলে তোমরা নিচে Comment Box এ গিয়ে Comment করতে পারো। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব তোমাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার।

আমাদের Article ভালো লাগলে লাইক, শেয়ার ও Subscribe করতে পারো। যাতে তোমাদের অনুপ্রেরনাকে পাথেয় করে আরো নিত্যনতুন বিষয়ের উপর সহজতর, বোধগম্য ও চিত্তাকর্ষক লেখনী নিয়ে হাজির হতে পারি। ততক্ষন তোমরা সুস্থ থাকো, ভালো থেকো এবং এভাবেই পড়তে থাকো।

ধন্যবাদ


Mehemud Ali

Mehemud Ali, an expert faculty of Bengali Grammar and Geography, love to teach.

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post