বঙ্গভূমির প্রতি | Bongobhumir Proti | Class 7 Bongobhumir Proti | সপ্তম শ্রেণীর কবিতা বঙ্গভূমির প্রতি

Bongobhumir Proti
বঙ্গভূমির প্রতি


Bongobhumir Proti

বঙ্গভূমির প্রতি

বঙ্গভূমির প্রতি
মাইকেল মধুসূদন দত্ত
কবি পরিচিতি -মাইকেল মধুসূদন দত্ত 1824 খ্রিস্টাব্দের 25 জানুয়ারি বর্তমান বাংলাদেশের যশোহর জেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তাঁর পিতা রাজনারায়ণ দত্ত পেশায় ছিলেন সম্ভ্রান্ত আইনজীবী মাতা জাহ্নবী দেবীর তত্ত্বাবধানে তার লেখাপড়া গ্রামের পাঠশালায় শুরু হয়। বেশ কিছু পরে 1837 খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতায় এসে হিন্দু কলেজে ভর্তি হন।কোভিদ জীবনে হিন্দু কলেজের যথেষ্ট প্রভাব ছিল। ইংরেজি ভাষায় ছিল তার অসাধারণ দক্ষতা ।1843 খ্রিস্টাব্দে বিলেতে গিয়ে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে তিনি 'মাইকেল নাম ধারী' হন। ছাত্রজীবন থেকে বিভিন্ন ইংরেজি রচনায় পাশাপাশি 'The Captive Lady' এবং 'Visions Of The Past' নামের দুখানি গ্রন্থ তার প্রকাশিত হয়। বাংলা জগতে তিনি কিছু বাংলা নাটক রচনা করেন সেগুলি যথাক্রমে 'বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ' 'শর্মিষ্ঠা' 'একেই কি বলে সভ্যতা' পদ্মাবতী কৃষ্ণকুমারী প্রভৃতি আরো কিছু কাব্য গ্রন্থ লিখেছিলেন কাব্যগ্রন্থ গুলি হল মেঘনাদবধ কাব্য বীরাঙ্গনা কাব্য তিলোত্তমাসম্ভবকাব্য।ইংরেজি সনেটের অনুসরণে বাংলায় চতুর্দশপদী কবিতাবলী বাংলার প্রথম কৃতিত্ব তার চতুর্দশপদী কবিতাবলী তার প্রতিভার অনন্য কৃতিত্ব ।জীবনের শেষপর্বে হেক্টরবধ নামে তার একটি গদ্য একখান প্রকাশিত হয়।1873 খ্রিস্টাব্দের 29 জুন কবি মারা যান।

$ads={1}

বঙ্গভূমির প্রতি

মাইকেল মধুসূদন দত্ত

“My Native Land, Good night!” : Byron

রেখো, মা, দাসেরে মনে,     এ মিনতি করি পদে।

সাধিতে মনের সাদ,

ঘটে যদি পরমাদ,

মধুহীন করো না গো         তব মনঃকোকনদে।

প্রবাসে, দৈবের বশে,

জীব-তারা যদি খসে

এ দেহ-আকাশ হতে,-         নাহি খেদ তাহে।

জন্মিলে মরিতে হবে,

অমর কে কোথা কবে,

চিরস্থির কবে নীর,         হায় রে, জীবন-নদে?

কিন্তু যদি রাখ মনে,

নাহি মা ডরি শমনে,

মক্ষিকাও গলে না গো,       পড়িলে অমৃত-হ্রদে!

সেই ধন্য নরকুলে,

লোকে যারে নাহি ভুলে,

মনের মন্দিরে সদা                     সেবে সর্বজন,-

কিন্তু কোন গুণ আছে,

যাচিব ও যে তব কাছে,

হেন অমরতা আমি,      কহ, গো, শ্যামা জন্মদে!

তবে যদি দয়া করো,

ভুল দোষ, গুণ ধরো,

অমর করিয়া বর               দেহ দাসে, সুবরদে!-

ফুটি যেন স্মৃতি- জলে,

মানসে, মা, যথা ফলে

মধুময় তামরস                 কি বসন্ত, কি শরদে!


$ads={2}

বিষয় সংক্ষেপ

মা যেন তাঁর চিরদাস কবিকে মনে রাখেন, বঙ্গভূমির প্রতি কবির এই মিনতি। মনের ইচ্ছা পূরণ করতে যদি কোন ভুল হয়ে থাকে, তবুও মা যেন তার লালপদ্ম সদৃশ মনকে মধুহীন না করেন। বিদেশে দৈবের কারণে যদি কবির জীবন তারা খসে পড়ে দেহের আকাশ থেকে, তাতে কবির কোনো দুঃখ নেই। কারণ কবি জানেন জন্ম নিলে মরতে একদিন হবেই, কেউ কোথাও অমর নয়। নদীতে জল কখনও স্থির থাকে না, তেমনি জীবন নদীতেও প্রাণ স্থির নয়। কিন্তু মা যদি কবিকে মনে রাখেন, তাহলে কবি মৃত্যুকেও ভয় পায় না। কারণ অমরতা দানকারী যদি মাছি গিয়ে পড়ে, তবে সে অমর হয় না, তারও মৃত্যু হয়। মানব সমাজে সে ধন্য যাকে মানুষ কখনো ভোলেনা, মনের মন্দিরে চিরকালের আসন দিয়ে ধরে রাখে। কিন্তু কবির এমন কোন গুণ আছে যে দেশ- মায়ের কাছে এমন অমরতা কবি দাবি করতে পারেন। তবে শ্যামা জন্মদাত্রী যদি তাঁকে দয়া করেন, দোষকে গুন  বলে ধরে নেন, তাহলে তিনি সুবরদাত্রী বলে কবিকে অমরতার দান করতে পারেন। কবি যেন স্মৃতি জলে ফোটে থাকেন মধুমাখা পদ্মের মতো, বসন্তে কিংবা শরতে।

পাঠ্যবইয়ের প্রশ্নোত্তর

১. ঠিক উত্তর টি খুঁজে নিয়ে লেখ:

১.১ 'বঙ্গভূমির প্রতি' কবিতায় যে শীর্ষ উল্লেখটি আছে, সেটি কবি বায়রন -এর রচনা। তাঁর রচিত একটি বিখ্যাত গ্রন্থ হল___।

উত্তর- ডন জুয়ান।

১.২ লাল বর্ণের পদ্ম ‘কোকনদ’। সেরকম নীল রঙের পদ্মকে__ও সাদা রঙের পদ্মকে__ বলা হয়।

উত্তর- ইন্দিবর, পুণ্ডরীক।

২. সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও:

২.১ “এই মিনতি করি পদে”--- কবি কার কাছে কি প্রার্থনা জানিয়েছেন।

উত্তর- কবি তাঁর দেশমাতৃকা তথা বঙ্গভূমির কাছে প্রার্থনা জানিয়েছেন যেন দেশ -মাতাকে মনে রাখেন। প্রবাসে থাকাকালীন যদি তাঁর মৃত্যুও হয়, তাতেও তিনি দুঃখ পাবেন না। যদি দেশমাতাতাঁকে মনে রাখেন, তাহলে যমকেও তিনি ভয় পান না।

২.২ “সেই ধন্য নরকুলে”---- কোন মানুষ নরকুলে ধন্য হন?

উত্তর- ‘নরকুল’  বলতে এখানে মানবকূলকে বুঝানো হয়েছে। এই মানবকুলে সেই সর্বাপেক্ষা ধন্য বলে কবি মনে করেন।

$ads={1}

৩. গদ্যরূপ লেখ:

পরমাদ- প্রমাদ।

যাচিব- চাইব।

কহ- বলো।

যথা- যে রূপ।

জন্মিলে- জন্ম নিলে।

দেহ- শরীর।

হেন - এরূপ।

সাধিতে- সাধন করতে।

৪. শূন্যস্থানে উপযুক্ত বিশেষণ বসাও:

------------মন্দির, ------------হ্রদে, -------তামরস।

উত্তর- মনের, অমৃত, মধুময়।

৫. স্থূলাক্ষর অংশগুলির কারক বিভক্তি নির্ণয় করো:

৫.১ রেখো, মা, দাসেরে মনে।

উত্তর- সম্বোধন পদে ‘শূন্য’ বিভক্তি।

৫.২ এ দেহ-আকাশ হতে।

উত্তর- অপাদান কারকে ‘শূন্য’ বিভক্তি।

৫.৩ মধুহীন করো না গো তব মনঃকোকনদে।

উত্তর- কর্ম কারকে ‘শূন্য’ বিভক্তি।

৫.৪ মনের মন্দিরে সদা সেবে সর্বজন।

উত্তর- অধিকরণ কারকে ‘এ’ বিভক্তি।

৫.৫ মক্ষিকাও গলে না গো পড়িলে অমৃত-হ্রদে

উত্তর -অধিকরণ কারকে ‘এ’ বিভক্তি।

৬. পদ পরিবর্তন করে বাক্য রচনা করো:

মধু- মধুরতা (রিমা ও সীমার সম্পর্ক অতি মধুর।

প্রকাশ- প্রকাশিত (আগামী শুক্রবার আমাদের বিদ্যালয়ের বার্ষিক পত্রিকা প্রকাশিত হবে। )

দেহ- দৈহিক (এখনকার মানুষ আর দৈহিক শ্রম দিতে চায় না।)

অমর-অমরত্ব (কবি অমৃত পান করে অমরত্ব লাভ করতে চাননি।

দোষ-দোষী ()

বসন্ত-বাসন্তী ()

দেব- দৈব ()

$ads={2}

৭. বিপরীতার্থক শব্দ লেখ:

প্রবাস- স্বদেশ।

অমর- নশ্বর।

স্থির- অস্থির।

জীবন- মৃত্যু।

অমৃত- গরল।

৮. ‘পরমাদ’ শব্দটি কোন মূল শব্দ থেকে এসেছে?

উত্তর- ‘পরমাদ’ শব্দটি এসেছে মূল শব্দ ‘প্রমাদ’ থেকে।

৯. কবি নিজেকে বঙ্গভূমির দাস বলার মধ্যে দিয়ে তাঁর কোন মনোভাবের পরিচয় মেলে?

উত্তর- কবি নিজেকে বঙ্গভূমির দাস বলার মধ্য দিয়ে জন্মভূমি বঙ্গভূমির প্রতি তাঁর অকৃত্রিম ভালবাসা ও শ্রদ্ধাপূর্ণ মনোভাবের পরিচয় মেলে।

১০. “মধুহীন করো না গো”- ‘মধু’ শব্দটি কোন দুটি অর্থে প্রযুক্ত হয়েছে?

উত্তর- ‘মধু’ শব্দটি দ্বারা কবি নিজের নাম মধু এবং পদ্ম ফুলের মধু এই দুটি অর্থ বুঝিয়েছেন।

১১. কবিতা থেকে পাঁচটি উপমা বা তুলনাবাচক শব্দ খুঁজে নিয়ে লেখ।

উত্তর- কবিতায় ব্যবহৃত পাঁচটি  তুলনাবাচক শব্দ হলো-দেহ-আকাশ, জীব-তারা, স্মৃতি-জলে, জীবন-নদে, মনঃকোকনদে।

১২. ‘মন্দির’ শব্দটির আদি ও প্রচলিত অর্থ দুটি লেখ।

উত্তর- ‘মন্দির’ শব্দটির আদি অর্থ ‘গৃহ’ এবং প্রচলিত অর্থ দেবগৃহ।

১৩. কবিতাটিতে কোন কোন ঋতুর উল্লেখ রয়েছে?

উত্তর- কবিতাটিতে বসন্ত ও শরৎ ঋতুর উল্লেখ রয়েছে।

$ads={1}

১৪. ‘মানস’ শব্দটি কবিতায় কোন কোন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে?

উত্তর- ‘মানস’ শব্দটির কবিতায় ব্যবহৃত একটি অর্থ- মন, অন্যটি- মানসসরোবর।

১৫. কবির দৃষ্টিতে নশ্বর মানুষ কিভাবে অমরতা লাভ করতে পারে তা লেখ।

উত্তর- কবি মনে করেছেন এই মরণশীল মানুষ তখনই অমরতা লাভ করতে পারে, যখন সাধারন মানুষ তাকে ভোলে না, মনের মাঝে তাকে রেখে দেয়।


Mehemud Ali

Mehemud Ali, an expert faculty of Bengali Grammar and Geography, love to teach.

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post