অব্যয় পদ |
সুপ্রিয় শিক্ষার্থীরা, আশা করি তোমরা সবাই ভালো আছো। আজ আমরা শিখবো এবং জানবো অব্যয়পদ( obboy pod) সম্পর্কে। অব্যয় পদকে সহজতরভাবে শিখতে হলে আমাদের অবশ্যই অব্যয়ের বেসিক সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। তাই আমরা প্রত্যেক অব্যয়ের উদাহরণসহ শ্রেণীবিভাগ করে তোমাদের সামনে উপস্থাপন করতে চলেছি অব্যয়ের ক্লাস। চলো তবে শুরু করি অব্যয়ের বেসিক থেকে সম্পূর্ণ আলোচনা।{tocify} $title={Table of contents}
অব্যয় শব্দের অর্থ কী?
অব্যয় শব্দের অর্থ হল - ন ব্যয়- অব্যয়।
অর্থাৎ কোনো অবস্থাতেই যে শব্দের পরিবর্তন হয় না এবং যে শব্দ
মনের আবেগ, বিস্ময় প্রকাশ
করে, একটি বাক্যের সঙ্গে আরেকটি বাক্যের সংযোগ ঘটায়, তাকে আমরাঅব্যয় পদ বলি।
অব্যয় পদ কী?
যে পদের কোন অবস্থাতেই (লিঙ্গ বচন পুরুষভেদ) কোন পরিবর্তন হয় না এবং মনের আবেগ বিস্ময় প্রকাশ করে দুটি বাক্য কে যুক্ত করে তাকে অব্যয় পদ বলে।
অব্যয় পদের প্রকারভেদ-
অব্যয় পদ সাধারণত চার রকম যথা-
১) পদান্বয়ী অব্যয়
২) সমুচ্চয়ী
অব্যয়
৩) অনন্বয়ী অব্যয়
৪) অনুকার অব্যয়
পদান্বয়ী অব্যয় কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে অব্যয় বাক্যের অন্তর্গত দুটি পদের মধ্যে সম্বন্ধ সম্পর্ক স্থাপন
করে তাকে পদান্বয়ী অব্যয় বলে।
যেমন-
তোমার জন্য অনেকক্ষণ
অপেক্ষা করেছি।
তোমার দিয়ে এ কাজ হবে না।
মায়ের মতো আপন কে আর হয়?
এখানে – জন্য, দিয়ে,----- পদাম্বয়ী অব্যয়।
এরূপ- দ্বারা, সঙ্গে, সহিত, ব্যতীত, পর্যন্ত, ন্যায়, বিনা ইত্যাদি।
সমুচ্চয়ী অব্যয় কাকে বলে?
উদাহরণ দাও।
যে অব্যয় একাধিক বাক্যকে
সংযুক্ত বা সংকুচিত করে তাকে সমুচ্চয়ী অব্যয় বলে।
যেমন- রাম এবং শ্যাম দুজনে খেলা করছে।
সে গরিব কিন্তু সৎ।
রমা কিংবা রমেশ আজ দার্জিলিং
যাবে।
এখানে- এবং, সৎ, কিংবা ------সমুচ্চয়ী
অব্যয়।
এরূপ- অথবা, ও, অথচ, বরং, যেহেতু ইত্যাদি।
সমুচ্চয়ী অব্যয়ের
প্রকারভেদ-
১)সংযোজক অব্যয়
২) প্রশ্নসূচক অব্যয়
৩) সাপেক্ষ অব্যয়
সংযোজক অব্যয় কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে পদ দুই বা দুইয়ের বেশি পদ বা বাক্যাংশ কে
যুক্ত করে বা তাদের মধ্যে সংযোগ ঘটায় তাকে সংযোজক অব্যয় বলে।
যেমন
সে মার খায় কিন্তু প্রতিবাদ করে না।
তুমি আর
আমি ছাড়া কেউ আসবে না।
রাম এবং
শ্যাম আজ দার্জিলিং যাবে।
এখানে- কিন্তু, আ্ এবং-------- সংযোজক অব্যয়।
এরূপ – অথচ, অথব্ বরং, ব্ তবু, কিংব্ যেহেতু
ইত্যাদি।
প্রশ্ন সূচক অব্যয় কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে অব্যয়ের দ্বারা
বাক্যে প্রশ্ন বোঝানো হয়, তাকে প্রশ্ন সূচক অব্যয় বলে।
যেমন- তোমার বাড়ি কোথায়?
তোমার নাম কী?
দুটির মধ্যে আমার কোনটি?
এখানে – কোথায়, কী, কোনটি -------প্রশ্নসূচক
অব্যয়।
এরূপ- কবে, কেন, কোথা, কেমন, কে ইত্যাদি।
সাপেক্ষ অব্যয় কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে পদের দ্বারা পরস্পর সম্পর্ক যুক্ত যে জোড়া
অব্যয় দুটি পৃথক বাক্যে পৃথকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং বাক্য দুটিকে একটি বাক্যে পরিণত
করে, সেই জোড়া অব্য্যকে সাপেক্ষ অব্যয় বলে।
যেমন- তুমি যদি
আসো তবে আমি যাব।
বরং না খেয়ে মরবো তবুও তার কাছে কিছু চাইবো না।
এখানে - যদি তবে, বরং তবুও----- সাপেক্ষ অব্যয়।
এরূপ - হয় নয়, যেই অমন্ এত যে ইত্যাদি।
অনন্বয়ী অব্যয় কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে পদের দ্বারা মানুষের মনের আনন্দ, দুঃখ, ঘৃণা, লজ্জা, আশঙ্কা প্রভৃতির প্রকাশ ঘটে তাদের অনন্বয়ী অব্যয়
বলে।
যেমন –
বিমলা, ছি ছি ! এমন কাজ তুমি করতে পারলে?
শাবাস ! বাপের বেটা বটে তুমি।
এখানে- ছি ছি, শাবাস -------অনন্বয়ী অব্যয়।
এরূপ- হায়, কী কী, কত না, বাহবা, বাঃ ইত্যাদি।
অনন্বয়ী অব্যয়ের প্রকারভেদ-
১) আলংকারিক অব্যয়
২) আবেগসূচক অব্যয়
৩) সম্মতিসূচক অব্যয়
৪) অসম্মতিসূচক অব্যয়
৫) সম্বোধনসূচক অব্যয়
৬) সাদৃশ্যসূচক অব্যয়
৭) সংশয়সূচক অব্যয়
আলংকারিক অব্যয় কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে অব্যয় পদের কোনো মানে হয় না কিন্তু বাক্যের
সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাক্যের শোভাবর্ধন করে তাকে আলংকারিক অব্যয় বলে।
যেমন-
গরিবের আবার রাত দিন।
শাহজাহানের কথা শুনে আমি তো একেবারে আকাশ থেকে পড়লাম।
এখানে –আবার, তো------- আলংকারিক অব্যয়।
এরূপ- কী, না, কীবা, অথচ, তো, তুমিও, বটে, কত
না ইত্যাদি।
আবেগসূচক অব্যয় কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে পদের দ্বারা মানুষের মনের ভাব আনন্দ, দুঃখ
, আশঙ্কা, লজ্জা, ঘৃনা, প্রকাশ ঘটে তাদের আবেগ
সূচক অব্যয় বলে।
যেমন-
বাঃ ! খুব ভালো অভিনয় করেছ।
হায় ! হায় ! আমার সর্বনাশ হয়ে গেল।
এখানে – বাঃ, হায় ! হায় ! --------আবেগ সূচক
অব্যয়।
এরূপ – শাবাশ ! ছি ছি, আহা, উঃ, ওরে বাবা ইত্যাদি।
সম্মতিসূচক অব্যয় কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে অব্যয় সমর্থন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় তাকে
সমর্থন বা সম্মতিসূচক অব্যয় বলে।
যেমন- হ্যাঁ, আজি আমি কলকাতা চলে যাচ্ছি।
হুঁ, দেখা যাবে কে কত বড়ো খেলোয়ার।
এখানে- হ্যাঁ, হুঁ, -------সম্মতিসূচক অব্যয়।
এরূপ- আচ্ছা, আঞ্জে, ইত্যাদি।
অসম্মতিসূচক অব্যয় কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে অব্যয়ের সাহায্যে অসম্মতি বোঝায়, তাকে অসম্মতিসূচক
অব্যয় বলে।
যেমন
আমি তোমার সঙ্গে মোটেই যাব না।
তুমি যা ভাবছো ব্যাপারটা তা নয়।
এখানে- না, নয় --------অসম্মতিসূচক অব্যয়।
এরূপ – নেই, নয়, কখনোই না ইত্যাদি।
সম্বোধনসূচক অব্যয় কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে পদের দ্বারা কাউকে সম্মোধন বা আহবান করার
জন্য যে অব্যয় ব্যবহৃত হয় তাকে সম্বোধনসূচক অব্যয় বলে।
যেমন-
হে ভগবান আমাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করো।
ওহে একটা বই নিয়ে এসো তো।
এখানে – হে, ওহে ----------সম্বোধনসূচক অব্যয়।
এরূপ- ওরে, ওহে, ওগো ইত্যাদি।
সাদৃশ্যসূচক অব্যয় কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে পদে সাদৃশ্য বা মিল বোঝানোর জন্য যেসব অব্যয়
এর ব্যবহার দেখা যায় তাকে সাদৃশ্যসূচক অব্যয় বলে।
যেমন-
তোমার মতো কাউকে দেখিনি।
ন্যায় সত্যের প্রতীক।
এখানে- মতো, ন্যায় --------সাদৃশ্যসূচক অব্যয়।
এরূপ- মতন, পারা, প্রায় হেন, ইত্যাদি।
সংশয়সূচক অব্যয় কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে অব্যয়ের দ্বারা কোনো বিষয়ে সংশয় বোঝায়,
তাকে সংশয়সূচক অব্যয় বলে ।
যেমন-
তুমি নাকি
কাল দিল্লি যাচ্ছ?
এখানে- নাকি -------সংসারসূচক অব্যয়।
এরূপ- যেন, বুঝি, কি না ইত্যাদি।
অনুকার অব্যয় কাকে বলে?
উদাহরণ দাও।
ধ্বনি বা আওয়াজ এর অনুকরণে যে অব্যয় ব্যবহৃত হয়, তাকে অনুকার অব্যয় বলে।
যেমন-
ঘড়িতে ঢং ঢং করে নটা
বাঁচল।
শনশন করে বাতাস
বইছে।
বাতাসে এখন শোঁ শোঁ শব্দ।
বৃষ্টি পড়ে টাপুর-টুপুর।
এখানে -ঢং ঢং, শনশন, শোঁ শো্ টাপুর-টুপুর -------অনুকার
অব্যয়।
এরূপ – ফিসফিস, টনটন, ধড়ফড়, ধু-ধু, ঠনঠন ইত্যাদি।
আমাদের Article ভালো লাগলে লাইক, শেয়ার ও Subscribe করতে পারো। যাতে তোমাদের অনুপ্রেরনাকে পাথেয় করে আরো নিত্যনতুন বিষয়ের উপর সহজতর, বোধগম্য ও চিত্তাকর্ষক লেখনী নিয়ে হাজির হতে পারি। ততক্ষন তোমরা সুস্থ থাকো, ভালো থেকো এবং এভাবেই পড়তে থাকো।
ধন্যবাদ