কারক। কারক ও বিভক্তি নির্ণয়

karok bivokti | কারক বিভক্তি
কারক ও বিভক্তি

সুপ্রিয় শিক্ষার্থীরা, আশা করি তোমরা সবাই ভালো আছো। আজ আমরা শিখবো এবং জানবো কারক সম্পর্কে। কারককে সহজতরভাবে শিখতে হলে আমাদের অবশ্যই কারকের বেসিক সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। তাই আমরা প্রত্যেক কারকের উদাহরণসহ শ্রেণীবিভাগ করে তোমাদের সামনে উপস্থাপন করতে চলেছি কারকের ক্লাস। চলো তবে শুরু করি কারকের বেসিক থেকে সম্পূর্ণ আলোচনা।

$ads={1}

{tocify} $title={Table of Contents}

কারক কী?

বাক্যের সমাপিকা ক্রিয়াপদের সঙ্গে ওই বাক্যের নামপদ অর্থাৎ বিশেষ্য ও সর্বনামপদগুলির সম্পর্ককেই কারক সম্পর্ক বলা হয়। 

কারকের প্রকারভেদ

কারক ছয় প্রকার। যেমন- ১) কর্তৃকারক

                                       ২) কর্মকারক

                                       ৩) করণকারক

                                       ৪) নিমিত্তকারক

                                       ৫) অপাদানকারক

                                       ৬) অধিকরণ কারক

ক্রিয়াকে প্রশ্নযে কারকে উত্তর
কে, কারা?কর্তৃকারক
কী, কাকে?কর্মকারক
কী দিয়ে, কীসের দ্বারা?করণকারক
দান, জন্য, সাহায্য?নিমিত্তকারক
হইতে, থেকে, চেয়ে?অপাদানকারক
কাল, সময়, স্থান, বিষয়?অধিকরণকারক

  কর্তৃকারক কাকে বলে? 

যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ বাক্যের মধ্যে ক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে কর্তৃকারক বলে। অর্থাৎ ক্রিয়ার সঙ্গে ‘কে’ বা ‘কারা’ যোগ করে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তা-ই কর্তৃকারক।

যেমন- খোকা বই পড়ে। এই বাক্যে ‘খোকাকে’  ‘কে’ দিয়ে প্রশ্ন করছে, তাই খোকা হল কর্তৃকারক। 

ছেলেরা মাঠে খেলা করে। এই বাক্যে ‘ছেলেদেরকে’  ‘কারা’ দিয়ে প্রশ্ন করছে, তাই ছেলেরা হল কর্তৃকারক।     $ads={2}

কর্তৃকারক বা কর্তার প্রকারভেদ

কর্তা সাধারণত ১২ রকম। যথা-

১) কর্তৃবাচ্যের কর্তা

২) প্রযোজক কর্তা

৩) প্রযোজ্য কর্তা

৪) সমধাতুজ কর্তা

৫) ব্যতিহার কর্তা

৬) বাক্যাংশ কর্তা

৭) উপবাক্যীয় কর্তা

৮) নিরপেক্ষ কর্তা

৯) সহযোগী কর্তা

১০) অনুক্ত কর্তা

১১) সাধন কর্তা

১২) কর্ম কর্তৃবাচ্যের কর্তা

কর্তৃবাচ্যের কর্তা কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

১) কর্তৃবাচ্যের কর্তা- কর্তৃবাচ্যে কর্তাই হল ক্রিয়ার নিয়ন্ত্রক। অর্থাৎ ক্রিয়া হল কর্তার নিয়ন্ত্রিত। যেমন -আজ বাড়িতে শিক্ষক মহাশয় পড়াতে এসেছে। এখানে “শিক্ষক মহাশয়” হলেন কর্তৃবাচ্যের কর্তা।

প্রযোজক কর্তা কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

২) প্রযোজক কর্তা- কর্তা নিজে কাজ না করে অন্যকে দিয়ে করিয়ে নিলে তা হবে প্রযোজক কর্তা। যেমন মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন এ বাক্যে মা যেহেতু শিশুকে দিয়ে কাজটি করাচ্ছেন তাই মাহলেন প্রযোজক কর্তা

রাখাল গোরু চরায়।এই বাক্যে কর্তা যেহেতু রাখালকে দিয়ে গোরু চরাচ্ছে তাই কর্তা হলেন প্রযোজক কর্তা। 

প্রযোজ্য কর্তা কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

৩) প্রযোজ্য কর্তা- যাকে দিয়ে প্রযোজক কর্তা কাজটি করে নেয় অর্থাৎ যে কর্তা অপরের প্রেরণায় কাজ করে, তাকে প্রযোজ্য কর্তা বলে। যেমন- বাবা ছেলেকে অংক করাচ্ছেন। ছেলে যেহেতু বাবার প্রেরণায় কাজটি করছে তাই ,ছেলে হল প্রযোজ্য কর্তা।

সমধাতুজ কর্তা কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

৪) সমধাতুজ কর্তা- যে ধাতু নিষ্পন্ন কর্তা ও যদি সেই একই ধাতু থেকে উৎপন্ন হয় তখন তাকে বলে সমধাতুজ কর্তা। যেমন-লেখক বই লেখেন। ক্রিয়া লেখেন ও কর্তা লেখক একই ধাতু লিখ থেকে উৎপন্ন।

-আমগাছটা বড় বাড় বেড়েছে। এখানে বাশব্দটি হল সমধাতুজ কর্তা।

ব্যতিহার কর্তা কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

$ads={1}

৫) ব্যতিহার কর্তা - একই ক্রিয়ার একের অধিক কর্তা থাকলে এবং তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বুঝালে সে কর্তাগুলি কে একসঙ্গে ব্যতিহার কর্তা বলে।

যেমন -কবিতে কবিতে যুদ্ধ হয়। এখানে কবিতে কবিতে হল ব্যতিহার কর্তা। রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়। এখানে রাজায় রাজায় হল ব্যতিহার কর্তা।

 বাক্যাংশ কর্তা কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

৬) বাক্যাংশ কর্তা- সমাপিকা ক্রিয়া বিহীন কোন বাক্যাংশ ক্রিয়া সম্পাদন করলে অর্থাৎ বাক্যের কিছুটা অংশ ক্রিয়ার কর্তা  হলে তাকে বাক্যাংশ কর্তা বলে।

যেমন- তোমার এই চলেযাওয়াটা ভালো দেখায়নি। এখানে তোমার এই চলে যাওয়াটা হল বাক্যাংশ কর্তা। সৎ পথে জীবনযাপন করা মোটেই সহজ নয়। এখানে সৎ পথে জীবনযাপন করা হল বাক্যাংশ কর্তা

উপবাক্যীয় কর্তা কাকে বলে? উদাহরণ  দাও।

৭) উপবাক্যীয় কর্তা-কোন বাক্যের অন্তর্গত উপবাক্য কর্তা হিসেবে ক্রিয়া সম্পাদন করলে তাকে উপবাক্যীয় কর্তা বলে। যেমন- সে এমনভাবে ফাঁকি দেবে ভাবতেই পারেনি। বাক্যটিতে সে এমনভাবে ফাঁকি দেবে এই খন্ড বাক্যটি হল উপবাক্যীয় কর্তার উদাহরণ। সে আসবেনা এটা হয় না।বাক্যটিতে সে আসবে না এই খন্ড বাক্যটি হলো উপবাক্যীয় কর্তার উদাহরণ।

নিরপেক্ষ কর্তা কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

৮) নিরপেক্ষ কর্তা- কোন বাক্যে উভয় সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়ার বিভিন্ন কর্তা থাকলে অসমাপিকা ক্রিয়ার নিয়ন্ত্রক কর্তাটিকে নিরপেক্ষ কর্তা বলা হয়। যেমন- তুমি’ মাতৃহীন হইলে আমি তোমার প্রতিপালন করিয়াছিলাম। এখানে তুমি হল নিরপেক্ষ কর্তা উদাহরণ। দাঁত থাকতে মানুষ দাঁতের মর্যাদা বোঝে না। এখানে দাঁত হলো নিরপেক্ষ কর্তার উদাহরণ।

সহযোগী কর্তা কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

৯) সহযোগী কর্তা- বাক্যে যদি দুটি কর্তা থাকে এবং তাদের পরস্পরের মধ্যে সহযোগিতায় ভাব থাকে অর্থাৎ দুই বা ততোধিক কর্তার মধ্যে সহযোগিতা থাকলে তাকে সহযোগী কর্তা বলে। যেমন –‘তুমি আমি মিলে পৌঁছে যাব। এখানে তুমি আমি কর্তা দুটির মধ্যে সহযোগিতায় ভাব থাকায় এটি সহযোগী কর্তার উদাহরণ। শাশুড়ি -বউয়ে বসে রুটি করছে। এখানে শাশুড়ি ও বউ কথা দুটির মধ্যে সহযোগিতার ভাব থাকায় এটি সহযোগী কর্তা উদাহরণ।

অনুক্ত কর্তা কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

১০) অনুক্ত কর্তা- কর্মবাচ্য ও ভাববাচ্যে কর্তা প্রধানরূপে উক্ত হয় না । অর্থাৎ মধ্যম পুরুষ এবং উত্তম পুরুষ পক্ষের কর্তা অনেক অনেক সময়েই উহ্য থাকে । তাই একে উহ্য কর্তা বা অনুক্ত কর্তা বলে।

যেমন -একদিন বাড়িতে আসবে। এখানে কর্তা তুমি উহ্য। তাই এটি অনুক্ত কর্তার উদাহরণ।

$ads={2}

সাধন কর্তা-কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

১১) সাধন কর্তা- সাধন কর্তা বা উপকরণ কর্তা হিসেবে ব্যবহার করলে তাকে উপকরণকর্তা বা সাধন বলে। যেমন -ঢেঁকি স্বর্গে গিয়ে ও ধান ভানে। এই বাক্যে ঢেঁকি একটি উপকরণ কর্তার উদাহরণ।

কর্ম কর্তৃবাচ্যের কর্তা -কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

১২) কর্ম কর্তৃবাচ্যের কর্তা- বাক্যে যদি ক্রিয়ার কর্তার উল্লেখ না থাকে এবং কর্ম যদি কর্তার মতো আচরণ করে তবে তাকে কর্ম কর্তৃবাচ্যের কর্তা বলা হয়। যেমন -শাঁখ বাজে। প্রদত্ত বাক্যটিতে ক্রিয়ার কর্তার উল্লেখ নেই এবং কর্ম এখানে কর্তার মতো আচরণ করায় বাক্যটিতে কর্ম কর্তৃবাচ্যের কর্তা হলএখানে শাঁখ

কর্মকারক কাকে বলে? 

কর্তা যাকে অবলম্বন করে বা আশ্রয় করে ক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে কর্মকারক বলে। অর্থাৎ ক্রিয়ার সঙ্গে ‘কী’ বা ‘কাকে ‘ দ্বারা প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, তা-ই কর্ম কারক

যেমন- খোকা বই পড়ে। এই বাক্যে ‘বই’  ‘কী’ দিয়ে প্রশ্ন করছে, তাই বই হল কর্মকারক।     

প্রদীপকে স্কুলে আজ ভালো দেখাচ্ছে।

এই বাক্যে ‘প্রদীপকে’  ‘কাকে’ দিয়ে প্রশ্ন করছে, তাই প্রদীপ হলেন কর্মকারক।

 কর্মকারকের প্রকারভেদ

 কর্ম সাধারণত ১০ রকম যথা- 

১) মুখ্য কর্ম 

২) গৌণ কর্ম   

৩) উদ্দেশ্য কর্ম   বিধেয় কর্ম   

৪) সমধাতুজ কর্ম  

৫) বাক্যাংশ কর্ম     

৬) উপবাক্যীয় কর্ম 

৭) কর্মকর্তৃবাচ্যের কর্ম 

৮) উহ্য কর্ম 

৯) অসমাপিকা ক্রিয়ারুপী কর্ম 

১০) কর্মের বিপ্সা

 মুখ্য কর্ম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।

১) মুখ্য কর্ম-কতকগুলি সকর্মক ক্রিয়ার দুটি করে কর্ম থাকে একটি প্রাণিবাচক এবং অপরটি বস্তুবাচক বস্তুবাচক কর্মটিকে মুখ্য কর্ম বলা হয় অর্থাৎ ক্রিয়াকে কি দিয়ে প্রশ্ন করলে মুখ্য কর্ম পাওয়া যায়

যেমন -রামবাবু আমাদের ইংরেজি পড়ান

এখানে ইংরেজি’ পদটিকে কি দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তাই হল মুখ্য কর্ম

বিকাশ তার ভাইকে অংক করায়

এখানে অংক’ পদটিকে কি দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তাই হল মুখ্য কর্ম

গৌণ কর্ম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।

২) গৌণ কর্ম- দ্বিকর্মক বাক্যের ব্যাক্তিবাচক ব্যক্তিবাচক কর্মটিকে বলা হয়। অর্থাৎ ক্রিয়া ‘কে, কাকে’ দিয়ে প্রশ্ন করলে গৌণ কর্ম পাওয়া যায়

যেমন- রাধিকা তার ভাইকে অঙ্ক করায়। ভাইকে পদটি গৌণ কর্ম

$ads={1}

উদ্দেশ্য কর্ম   বিধেয় কর্ম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।

৩) উদ্দেশ্য কর্ম   বিধেয় কর্ম-কোন কোন ক্রিয়ার ক্ষেত্রে একটি কর্ম ছাড়াও আরেকটি পরিপূরক কর্মের প্রয়োজন হয় স্বাভাবিক বিভক্তিযুক্ত কর্মটি উদ্দেশ্য কর্ম  আর পরিপূরক বিভক্তিহীন কর্মটি  বিধেয় কর্ম

যেমন -রানী মাস্টার মশাইকে দেবতা মনে করে আলোচ্য বাক্যে মাস্টারমশাই’ কে আমরা উদ্দেশ্য কর্ম আর দেবতা’ বিধেয়  কর্ম

সমধাতুজ কর্ম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

৪) সমধাতুজ কর্ম-ক্রিয়াটি যে ধাতু থেকে নিষ্পন্ন কর্ম   যদি সেই একই ধাতু থেকে নিষ্পন্ন হয় তাহলে  কর্মটিকে বলা হয় সমধাতুজ কর্ম

যেমন -দুই বন্ধু মিলে কি খেলাই না খেললআলোচ্য বাক্যে খেলা এই ধাতু থেকেই ক্রিয়া কর্ম দুইটিই পাওয়া যাচ্ছে তাই এখানে খেলায়’ সমধাতুজ কর্ম

বাক্যাংশ কর্ম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।

৫) বাক্যাংশ কর্ম-সমাপিকা ক্রিয়া বিহীন বাক্যাংশ যদি কর্ম হিসাবে ব্যবহৃত হয় তবে তা বাক্যাংশ কর্ম যেমন –‘একের পর এক হেরে যাওয়া’ আমি আর মেনে নেব না আলোচ্য বাক্যে একের পর এক হেরে যাওয়া’ হল বাক্যাংশ কর্ম

উপবাক্যীয় কর্ম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

৬) উপবাক্যীয় কর্ম -জটিল বাক্যের অর্প্রধান অংশ কর্ম রূপে ব্যবহৃত হলে তাকে উপবাক্যীয়  কর্ম বলে যেমন ‘শেষ অবধি তাদের কি হল’ কেউ জানে না আলোচ্য বাক্যে শেষ অবধি তাদের কি হলো’ এই উপবাক্য টি কর্ম রূপে ব্যবহৃত হয়েছে

কর্মকর্তৃবাচ্যের কর্ম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

৭) কর্মকর্তৃবাচ্যের কর্ম-কর্ম যেখানে কর্তার ভূমিকা নেই অর্থাৎ কর্ম যেখানে কর্তা রূপে ক্রিয়া সম্পাদন করে সেই কর্মটি হলো কর্মকর্তৃবাচ্যের কর্ম

যেমন -সীতাকে ভালো দেখাচ্ছিল আলোচ্য বাক্যে সীতাকে’ হল কর্মকর্তৃবাচ্যের কর্ম

উহ্য কর্ম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

৮) উহ্য কর্ম-বাক্যের কর্ম যখন উহ্য  থাকে তখন তাকে উহ্য কর্ম বলে যেমন সবাই এখন(বই) পড়ছে এখানে সবাই এখন কি পড়ছে অর্থাৎ বই পরছে বই শব্দটি উহ্য আছে

অসমাপিকা ক্রিয়ারুপী কর্ম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

৯) অসমাপিকা ক্রিয়ারুপী কর্ম -অসমাপিকা ক্রিয়া যখন কর্মের মতো আচরণ করে তখন তাকে অসমাপিকা ক্রিয়ারূপী কর্ম বলা হয় যেমন -খোকা এখন হাঁটতে শিখেছে আলোচ্য বাক্যে হাঁটতে’ অসমাপিকা ক্রিয়ারূপী কর্ম

কর্মের বিপ্সা কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।

১০) কর্মের বিপ্সা-একই কর্ম একাধিকার ব্যবহৃত হলে অর্থাৎ একই কর্ম পুনরাবৃত্তি হলে তাকে কর্মের বিপ্সা বলা হয় যেমন –‘যা যা আনতে বলেছিলাম এনেছো’ এই বাক্যে যা যা হলো কর্মের বীপ্সা ‘যা যা করার করো’ এই বাক্যে যা যা হলো কর্মের বিপ্সা

করণকারক কাকে বলে?

 কর্তা যার সাহায্যে ক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে করণকারক বলে। অর্থাৎ বাক্যের ক্রিয়াপদের সঙ্গে ‘কিসের দ্বারা’ বা ‘কী দ্বারা’ প্রশ্ন করলে যে উত্তরটি পাওয়া যায়, তা-ই করণকারক।

যেমন- রমেশ কলম দিয়ে লেখে। এখানে ‘কলম’-র দ্বারা কাজটি নিষ্পন্ন হওয়ায় ‘কলম’ হল করণ কারক এবং এর সঙ্গে ‘দিয়ে’ অনুসর্গটি যুক্ত হয়েছে।

মানুষ বুদ্ধির দ্বারা অনেক কিছু হাতের মুঠোও নিয়ে এসেছে। এখানে ‘বুদ্ধির’-র দ্বারা কাজটি নিষ্পন্ন হওয়ায় ‘বুদ্ধি’ হল করণ কারক এবং এর সঙ্গে ‘দ্বারা’ অনুসর্গটি যুক্ত হয়েছে।

$ads={2}

করণের প্রকারভেদ

 করণ সাধারণত আট রকম যথা-

১) সাধন বা যন্ত্রাত্মক করণ

২) উপায়াত্মক করণ

৩) হেত্বর্থক করণ

৪) কালাত্মক করণ

৫) লক্ষণাত্মক করণ

৬) সমধাতুজ করণ

৭) অসমাপিকা ক্রিয়ারূপীকরণ

৮) করণের বীপ্সা

সাধন বা যন্ত্রাত্মক করণ কাকে বলে ? উদাহরণ দাও

১) সাধন বা যন্ত্রাত্মক করণ- কোন বস্তু বা যন্ত্র দ্বারা ক্রিয়া সম্পন্ন হলে তাকে সাধন বা যন্ত্রাত্মক করণ  বলে

যেমন- ছুরি দিয়ে সবজি গুলো কেটে ফেলো।এখানে চুরির দ্বারা কাজটি নিষ্পন্ন হওয়ায় চুরি হল করণ কারক এবং এর সঙ্গে দিয়ে অনুসর্গটি যুক্ত হয়েছে।

উপায়াত্মক করণ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

২) উপায়াত্মক করণ- য়ে উপায়ের মাধ্যমে ক্রিয়া সম্পন্ন হয় বা নিষ্পন্ন হয় তাকে উপায়াত্মক করণ বলে।

যেমন- ভারত শুধু বুদ্ধি দিয়ে ক্রিকেটটা খেলল। এখানে বুদ্ধি উপায়ের  দ্বারা ক্রিকেটটা খেলা হয়েছে বলে বুদ্ধি  হল উপায়াত্মক করণের  উদাহরণ।

হেত্বর্থক করণ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

৩) হেত্বর্থক করণ- হেতু বা কারণ বোঝাতে যে করন ব্যবহৃত হয় তাকে হেত্বর্থক করণ বলা হয়।

যেমন -বৃদ্ধ মানুষটি তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়েছে। এখানে তৃষ্ণা হেতুর জন্য বৃদ্ধ মানুষটি কাতর হয়ে পড়েছে সে কারণে তৃষ্ণায় হল হেত্বর্থক করণ

কালাত্মক করণ কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।

৪) কালাত্মক করণ- কাল বা সময় বোঝাতে যে করণ ব্যবহৃত হয় তাকে কালাত্মক করণ বলা হয়।

যেমন-  ত্রিশ দিনে এক মাস হয়।এখানে সময় ও কাল বোঝাচ্ছে বলে ত্রিশদিনে হল কালাত্মক করণের উদাহরণ।

লক্ষণাত্মক করণ কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।

৫) লক্ষণাত্মক করণ-কোন লক্ষণ বা চিহ্ন বোঝাতে যে করণ ব্যবহৃত হয় তাকে ক্ষণাত্মক করণ বলা হয়।

যেমন- শিকারী বিড়াল গোঁফে চেনা যায়। এই বাক্যটিতে গোঁফ’ শব্দের দ্বারা লক্ষণ বা চিহ্ন নির্দেশ করেছে বলে গোঁফ হল উপ লক্ষণে বা লক্ষণাত্মক করণের উদাহরণ।

সমধাতুজ করণ কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।

৬) সমধাতুজ করণ- বাক্যের ক্রিয়া ও করণ যখন একই ধাতু থেকে নিষ্পন্ন হয় তাকে সমধাতুজ করণ বলে।

যেমন- বেঞ্চ গুলো ঝাড়ুন দিয়ে  ঝেড়ে দাও। বাক্যটিতে ‘ঝাড়ন’ ও ‘ঝেড়ে’ একই ‘ঝাড়’ ধাতু থেকে নিষ্পন্ন হওয়ায় এখানে ‘ঝাড়ন’ সমধাতুজ করণ।

অসমাপিকা ক্রিয়ারূপীকরণ কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।

৭) অসমাপিকা ক্রিয়ারূপীকরণ- কোন অসমাপিকা ক্রিয়া করণের মতো আচরণ করলে তাকে অসমাপিকা ক্রিয়ারূপী করণ বলা হয়।

যেমন- সে অনুষ্ঠানে গান গেয়ে সকল দর্শকের মন জয় করল।এখানে গান গেয়ে অসমাপিকা ক্রিয়া টি করণের মত আচরণ করায় এটি অসমাপিকা ক্রিয়ারূপী করণ হয়েছে।

$ads={1}

করণের বীপ্সা কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

৮) করণের বীপ্সা-একই শব্দের পুনরাবৃত্তি বোঝাতে বা একই শব্দের দুইবার প্রয়োগ ঘটাকে করণের বীপ্সা বলে।

যেমন- আমরা হাতে হাতে বইগুলো করে নিই। এখানে হাতে হাতে শব্দদ্বয় করণের বীপ্সার উদাহরণ।

নিমিত্তকারক কাকে বলে?

 ক্রিয়া সম্পর্কে ‘কাকে’, ‘কেন’, ‘কী জন্য’ বা ‘কার উদ্দেশ্যে’ প্রশ্ন করলে উত্তরে যে পদ পাওয়া যায় তা-ই নিমিত্তকারক।

যেমন-

ভিখারিকে ভিক্ষা দাও। প্রদত্ত বাক্যে ‘ভিখারিকে’ অর্থে ‘ভিখারির জন্য’। তাই এটি নিমিত্তকারক।

ক্ষুদিরাম দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। প্রদত্ত বাক্যে ‘দেশের ’ অর্থে ‘দেশের জন্য জন্য’। তাই এটি নিমিত্তকারক।

নিমিত্ত কারকের প্রকারভেদ

নিমিত্ত কারক সাধারণত তিন রকম যথা-

১) নিমিত্তার্থে

২) উদ্দেশ্য অর্থে

৩) উদ্দেশ অর্থে

নিমিত্তার্থে কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।

১) নিমিত্তার্থে -জন্য বা নিমিত্ত বোঝালে নিমিত্ত কারক হয়

ক্ষুদিরাম দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন এই বাক্যে দেশেরজন্য হলো নিমিত্তার্থে

উদ্দেশ্য অর্থে কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।

২) উদ্দেশ্য অর্থে- যে নিমিত্ত কারকের উদ্দেশ্য   অর্থ বোঝাবে তাকে উদ্দেশ্য অর্থে নিমিত্ত বলে

যেমন রামবাবু দোকানে গেছেন এই বাক্যে দোকানেযাওয়া একটি উদ্দেশ্য বোঝাচ্ছে

উদ্দেশ অর্থে কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।

৩) উদ্দেশ অর্থে- যে নিমিত্ত কারকের কোন কিছুর উদ্দেশে বুঝালে উদ্দেশ অর্থে নিমিত্ত

যেমন মাস্টারমশাই ছাত্রদের উদ্দেশ্যে একটি প্রশ্ন করলেন   

 অপাদানকারক কাকে বলে?

 বাক্যের মধ্যে অনেক সময়ে কোনো কোনো শব্দের মাধ্যমে কোন কিছু উৎপন্ন, পতিত, জাত ইত্যাদি বোঝায়। অর্থাৎ হইতে, থেকে, চেয়ে বোঝালে আমরা অপাদান কারক বলি।

যেমন- গাছ থেকে পাতা পড়ে। এখানে কোনো আধার বা স্থান থেকে বিশ্লেষ বা চ্যুতি বোঝাচ্ছে বলে এখানে অপাদান কারক হয়েছে। আমার বাড়ি থেকে স্কুল দুই-মাইল। এখানে যেহেতু ‘বাড়ি থেকে’ স্থানটির দূরত্ব নির্দেশিত হচ্ছে, তাই এখানে অপাদান কারক হয়েছে।

অপাদান কারকের প্রকারভেদ

অপাদান কারক সাধারণত ছয় রকম যথা-

১) স্থানবাচক অপাদান

২) অবস্থানবাচক অপাদান

৩) কালবাচক অপাদান

৪) দূরত্ববাচক অপাদান

৫) তুলনাবাচক বা তারতম্যবাচক অপাদান

৬) অসমাপিকা ক্রিয়ারূপী অপাদান

স্থানবাচক অপাদান কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

১) স্থানবাচক অপাদান-কোনো স্থান বা আধার থেকে বিচ্যুতি বা প্রাপ্তি বোঝালে স্থান বাচক অপাদান হয়

যেমন - ছেলেটা গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে নিচে পড়ল এখানে ‘গাড়ি থেকে’ বা আধার থেকে  বিশ্লেষ বোঝাচ্ছে বলে স্থানবাচক অপাদান হয়েছে

অবস্থানবাচক অপাদান কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।

 ২) অবস্থানবাচক অপাদান- কোনো অবস্থান থেকে ক্রিয়া নিষ্পত্তি হলে তাকে অবস্থানবাচক অপাদান বলে

যেমন-  আমি ছাদ থেকে ঘটনাটা দেখলাম এখানে ছাদ থেকে ক্রিয়া নিষ্পন্ন হয় বলে এখানে অবস্থানবাচক অপাদান হয়েছে

$ads={2}

 কালবাচক অপাদান কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

৩) কালবাচক অপাদান- যে অপাদান কারকে কাল বা সময় বোঝায় তাকে কালবাচক অপাদান বলে অর্থাৎ কোনো নির্দিষ্ট সময় বা কাল বুঝাবে

যেমন - আমি কাল থেকে রামপুরহাটে আছি এই বাক্যে কাল থেকে একটা কাল সময় বোঝানো হচ্ছে বলে এখানে কাল বাচক অপাদান হয়েছে

দূরত্ববাচক অপাদান কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

৪) দূরত্ববাচক অপাদান- কোন স্থান থেকে দূরত্ব বোঝানো হলে তাকে দূরত্ব বাচক অপাদান বলে অর্থাৎ দুই বা ততোধিক নির্দিষ্ট স্থানের দূরত্ব বোঝায়

যেমন- রামপুরহাট থেকে আমাদের গ্রামের বাড়ি ছয় মাইল দূরে এখানে যেহেতু রামপুরহাট থেকে ‘স্থানটির দূরত্ব নির্দেশিত হচ্ছে তাই এখানে দূরত্ব বাচকঅপাদান হয়েছে

তুলনাবাচক বা তারতম্যবাচক অপাদান কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

৫) তুলনাবাচক বা তারতম্যবাচক অপাদান- দুই বা ততোধিক বা তার বেশি ব্যক্তি বা বস্তুর তুলনা করতে যে অপাদান হয়, তাকে তারতম্যবাচক বা তুলনাবাচক অপাদান বলে

যেমন- রামের চেয়ে জয় বয়সে বড়ো এখানে রাম জয়ের মধ্যে তুলনা বোঝাচ্ছে বলে তারতম্য বাচক অপাদান হয়েছে

অসমাপিকা ক্রিয়ারূপী অপাদান কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

৬) অসমাপিকা ক্রিয়ারূপী অপাদান- অনেক সময় অসমাপিকা ক্রিয়া অপাদানের মতো আচরণ করে বলে একে অসমাপিকা ক্রিয়ারূপী অপাদান  বলে

যেমন - সত্য কথা বলতে ভয় পায় না বাক্যটিতে ‘বলতে’ অর্থাৎ বলা থেকে একটি অসমাপিকা ক্রিয়া অপাদানের মতো আচরণ করায় এটি হল অসমাপিকা ক্রিয়ারূপী অপাদান

অধিকরণ কারক কাকে বলে?

 বাক্যের মধ্যের ক্রিয়াসম্পাদনকে ঘিরে অর্থাৎ, কীভাবে ক্রিয়াটি করা হচ্ছে তার ভিত্তিতে কিছু পদকে আশ্রয় করে ক্রিয়াটির স্থান, সময়, কাল, বিষয় বা ভাব ফুটে ওঠে।

যেমন- বসন্তে কোকিল ডাকে। আলোচ্য বাক্যে ‘ কলকাতায়’ এই বিশেষ্য পদটি স্থান বোঝাচ্ছে। তাই এটি অধিকরণকারক।

শীতকালে গাছের পাতা পড়ে যায়। আলোচ্য বাক্যে ‘ শীতকালে’ এই বিশেষ্য পদটি কাল বোঝাচ্ছে। তাই এটি অধিকরণকারক।

অধিকরণ কারকের প্রকারভেদ

অধিকরণকারক সাধারণত চার রকম যথা-

১) স্থানাধিকরণ

২) কালাধিকরণ

৩) ভাবাধিকরণ

৪) বিষয়াধিকরণ

স্থানাধিকরণ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

১) স্থানাধিকরণ- যে স্থানে ক্রিয়াটি অনুষ্ঠিত হয়, বা কর্তা যে স্থানে ক্রিয়াটি সম্পাদন করে তাকেই স্থানাধিকরণ কারক বলে।

 যেমন- মালদায় প্রচুর আম চাষ হয়। এই বাক্যে ‘মালদা’ স্থানটিতে অধিকরণ কারক হয়েছে।

১) একদেশ সূচক- সর্বত্র বিস্তার লাভ করেনি মাত্র কোন বিশেষ অংশে কোন কিছুর অবস্থান বোঝালে এক দেশ সূচক স্থানাধিকরণ হয়।

যেমন - বইটা ব্যাগে রাখো। এই বাক্যে স্থান হিসেবে শুধুমাত্র ‘ব্যাগ’ কে বোঝানো হয়েছে।

২) ব্যপ্তিসূচক স্থানাধিকরণ- কোন বিশেষ অংশে নয় সর্বত্রই রয়েছে এমন বোঝালে তাকে ব্যপ্তিসূচক স্থানাধিকরণ বলে।

যেমন- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম বিশ্বে ছড়িয়ে আছে।এই বাক্যে ক্রিয়াটি কোন বিশেষ অংশে নয় , সমস্ত জায়গা জুড়ে অনুষ্ঠিত হওয়া বোঝাচ্ছে। তাই এখানে ব্যাপ্তি সূচক স্থান অধিকরণ হয়েছে।

৩) সামীপ্য সূচক স্থানাধিকরণ- কাছে অবস্থিত এমন বোঝালে তাকে সামীপ্যসূচক স্থানাধিকরণ বলে।

যেমন- পৌষ সংক্রান্তিতে গঙ্গাসাগরের মেলা হয়। এই বাক্যে গঙ্গাসাগরে অর্থে সাগরের জল নয় ‘সাগরের’ তীর বোঝানো হয়েছে তাই এটি সামীপ্য স্থানাধিকরণের উদাহরণ।

কালাধিকরণ কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।

$ads={1}

২) কালাধিকরণ- যে সময়ে ক্রিয়াটি অনুষ্ঠিত বা সম্পাদিত হয় তাকে কালাধিকরণ বলে।

যেমন- সকাল 'টায় আমাদের বাস আছে। এই বাক্যে সময় বোঝানো হয়েছেতাই এটি কালাধিকরণ কারকের উদাহরণ।

১) ক্ষণমূলক- অতি কম সময়ের মধ্যে কোন ক্রিয়া অনুষ্ঠিত হলে তাকে ক্ষণমূলক কালাধিকরণ বলে।

যেমন-  রাত্রি একটাই দুর্গা পুজো শুরু হল। আলোচ্য বাক্যে ক্রিয়াটি অল্প সময় অর্থে ব্যবহার হয়েছে।

২) ব্যাপ্তি মূলক- বেশি সময় ধরে ক্রিয়াটি অনুষ্ঠিত হলে ব্যাক্তি মূলক কালাধিকরণ বলে।

যেমন - শীতকালে দিন ছোট, রাত বড়ো। আলোচ্য বাক্যে ‘শীতকাল’ একটি দীর্ঘ সময় পর্ব।

ভাবাধিকরণ কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।

৩) ভাবাধিকরণ- যখন কোন ভাব এর উপর নির্ভর করে বা কোন একটি মনোভাবকে নির্দেশ করে তখন তাকে ভাবাধিকরণ কারক বলে।

যেমন-  যতীন মামার বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছে। এই বাক্যে বেড়াতে যাওয়ার ‘আনন্দে’ আত্মহারা হওয়ার ভাবটি প্রকাশিত হয়েছে।

বিষয়াধিকরণ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

৪) বিষয়াধিকরণ- যে বিষয়ে ক্রিয়া নিষ্পন্ন হয় বা যখন কোন বিষয়কে আশ্রয় করে অধিকরণ হয়, তখন তাকে বিষয়াধিকরণ কারক বলে।

যেমন - আমি ইংরেজিতে খুব কাঁচা। আলোচ্য বাক্যে ‘ইংরেজি’ এই বিষয়কে আশ্রয় করে অধিকরণ হয়েছে।

বিভক্তি কী?

যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি শব্দের শেষে যুক্ত হয়ে পদ গঠন করে বা শব্দকে বাক্যে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলে তাকে বিভক্তি বলা হয়।

  বাংলা ভাষায় বিভক্তিচিহ্নগুলি হল- এ, কে, য়, তে, রে, ইত্যাদি। এছাড়া শূন্য বিভক্তি।

যেমন- আকাশে আজ তারার মেলা।

আকাশে= আকাশ+ বিভক্তি,   তারার= তারা + বিভক্তি

বাবাকে কলকাতায় যেতে হবে।

বাবাকে= বাবা + কে বিভক্তি,  কলকাতায় = কলকাতায় + বিভক্তি

বিভিক্তির প্রকারভেদ

বিভক্তি সাধারণত দুই রকম যথা-

১) শব্দ বিভক্তি

২) ধাতু বিভক্তি

শব্দ বিভক্তি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

 ১) শব্দ বিভক্তি- শব্দের সঙ্গে যে বিভক্তি যুক্ত হয় তাকে শব্দ বিভক্তি বলে

যেমন- বসন্তকালে নানা রঙের ফুল ফোটে

এখানে বসন্তকালেরঙের’ ফোটে শব্দের সঙ্গে যথাক্রমে

 কে ‘এর’ ‘এ’ বিভক্তি যুক্ত হয়েছে এই বিভক্তি গুলিকে বলা হয় শব্দ বিভক্তি এবং ‘বসন্তকালে’ ‘রঙের’ ‘ফোটে এগুলো হলো নাম পদ

ধাতু বিভক্তি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

$ads={2}

২) ধাতু বিভক্তি- ক্রিয়া ক্ষেত্রে ধাতুর সঙ্গে যে বিভক্তি যুক্ত হয় তাকে বলে ধাতু বিভক্তি

যেমন - আমি করি,সে করে, তুমি করিবে ইত্যাদি

করি= কর + বিভক্তি

করে= কর+ বিভক্তি

করিবে= কর+ইবে বিভক্তি

 

বিভক্তির নাম বিভক্তি
প্রথমা বিভক্তি ০, অ
দ্বিতীয়া বিভক্তি কে, রে
তৃতীয়া বিভক্তি দিয়া (দিয়ে), দ্বারা
চতুথী বিভক্তি কে, রে
পঞ্চমী বিভক্তি হইতে, থেকে,চেয়ে
ষষ্ঠী বিভক্তি এর, র
সপ্তমী বিভক্তি এ, তে, য়

কারক ও বিভক্তি প্রশ্নগুলির উত্তর কীভাবে সহজে করতে পারব?

১) আমার মনের মধ্যে গান জেগে উঠে।

২) আমি দাড়িয়ে রইলাম।  

৩) দিন-দুপুরে পাখির ডাকে।

৪) চিনবে তারা ভুবনটাকে।

৫) রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব তার বিমান থেকে নামলেন।

৬) তল্লাশিতে পাওয়া যায় সাতটা মশার পিস্তল।

৭) আমি ছিটকে চলে গেলাম খাটের তলায়

৮) কবি তাঁর ঘরের আসনে বসে টেলিফোনে কবিতা পাঠ  করবেন।

৯) তিনজন কলেরায় মারা গেছে।

১০) মাধবী বই পড়ছে।

১) আমার মনের মধ্যে গান জেগে উঠে।

এই বাক্যটির সঠিক উত্তর কর্ম কারকে শূন্য বিভক্তি। কারণ  এখানে গান  শব্দটিকে  কি দিয়ে প্রশ্ন করেছে তাই  কর্ম কারক। আর মূল শব্দের সঙ্গে কোন বিভক্তি যোগ নেই বলে শূন্য বিভক্তি হয়েছে।

২) আমি দাড়িয়ে রইলাম।  

এই বাক্যটির সঠিক উত্তর ‘কর্তৃকারকে শূন্য বিভক্তি। কারণ আমি দাড়িয়ে রইলাম এখানে আমি বলতে কে দিয়ে প্রশ্ন করেছে তাই কর্তৃকারক। আর আমি অর্থাৎ মূল শব্দটির শেষে কোন বিভক্তি যোগ নে বলে শূন্য বিভক্তি হয়েছে।

$ads={1}

৩) দিন-দুপুরে পাখির ডাকে।

এই বাক্যটির সঠিক উত্তর অধিকরণ কারকে    বিভক্তি। কারণ  দিন- দুপুর একটা সময় বুঝাচ্ছে তাই অধিকরণ  কারক। আর দিন দুপুরে অর্থাৎ মূল শব্দের শেষে বিভক্তি যোগ আছে তাই বিভক্তি হয়েছে

৪) চিনবে তারা ভুবনটাকে।

এই বাক্যটির সঠিক উত্তর কর্তৃকারকে শূন্য বিভক্তি। কারণ  তারা বা কারা এগুলো দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তরটি পায় তা হল কর্তৃকারক। আর তারা বা মূল শব্দের শেষে কোন বিভক্তি যুক্ত নে বলে শূন্য বিভক্তি হয়েছে।

৫) রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব তার বিমান থেকে নামলেন।

এই বাক্যটির সঠিক উত্তর অপাদানকারকে থেকে বিভক্তি। কারণ হইতে, থেকে, চেয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পায় তা হল অপাদান কারক।

আর বিমান থেকে বা মূল শব্দ থেকে আমরা থেকে বিভক্তি পেয়েছি।

৬) তল্লাশিতে পাওয়া যায় সাতটা মশার পিস্তল।

এই বাক্যটির সঠিক উত্তর করণ কারকে তে বিভক্তি। কারণ তল্লাশিতে অর্থাৎ তল্লাশির দ্বারা পাওয়া গেছে সাতটা মশার পিস্তল । আমরা জানি দ্বারা বা দিয়া (দিয়ে) প্রশ্ন করলে যে উত্তরটি পাই তা হল করণ কারক। আর তল্লাশিতে বা মূল শব্দের শেষে তে বিভক্তি যুক্ত আছে বলে তে বিভক্তি হয়েছে।

৭) আমি ছিটকে চলে গেলাম খাটের তলায়

এই বাক্যটির সঠিক উত্তর অধিকরণ কারকে য় বিভক্তি।

কারণ খাটের তলায় একটা স্থান দিয়ে প্রশ্ন করেছে আমরা জানি জায়গা বা স্থান দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পায় তা হল অধিকরণ কারক। আর খাটের তলায় বা মূল শব্দের শেষে য় বিভক্তি যুক্ত আছে বলে য় বিভক্তি হয়েছে।

৮) কবি তাঁর ঘরের আসনে বসে টেলিফোনে কবিতা পাঠ  করবেন।

এই বাক্যটির সঠিক উত্তর অধিকরণ কারকের বিভক্তি। কারণ ঘরের আসনে অর্থাৎ ঘরের একটি স্থান আমরা জানি কোন জায়গা বা স্থান দিয়ে

প্রশ্ন করলে যে উত্তরটি পায় তা হল অধিকরণ কারক। আর ঘরের আসনে বা মূল শব্দের শেষে বিভক্তি যুক্ত আছে বলে বিভক্ত হয়েছে।

৯) তিনজন কলেরায় মারা গেছে।

এই বাক্যটির সঠিক উত্তর করণ কারকে বিভক্তি।

কারণ এখানে কলেরার দ্বারা মারা গেছে অর্থাৎ কিসের দ্বারা বা কি দ্বারা প্রশ্ন করলে আমরা যে উত্তরটি পায় তা হল করণকারক। আর কলেরা বা মূল শব্দের শেষে য় বিভক্তি যুক্ত আছে বলে য় বিভক্তি হয়েছে।

১০) মাধবী বই পড়ছে।

এই বাক্যটির সঠিক উত্তর কর্তৃ কারকে শূন্য বিভক্তি।

কারণ মাধবীকে কে দিয়ে প্রশ্ন করেছে অর্থাৎ কে বা কারা দিয়ে প্রশ্ন করলে আমরা যে উত্তর পাই তা-হল কর্তৃকারক। আর মাধবী বা মূল শব্দের শেষে কোন বিভক্তি যুক্ত নে বলে শূন্য বিভক্তি হয়েছে।

যদি কারক সম্পর্কে তোমাদের কোনো অসুবিধা থাকে, তাহলে তোমরা নিচে Comment Box এ গিয়ে Comment করতে পারো। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব তোমাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার।

আমাদের Article ভালো লাগলে লাইক, শেয়ার ও Subscribe করতে পারো। যাতে তোমাদের অনুপ্রেরনাকে পাথেয় করে আরো নিত্যনতুন বিষয়ের উপর সহজতর, বোধগম্য ও চিত্তাকর্ষক লেখনী নিয়ে হাজির হতে পারি। ততক্ষন তোমরা সুস্থ থাকো, ভালো থেকো এবং এভাবেই পড়তে থাকো।

ধন্যবাদ

Mehemud Ali

Mehemud Ali, an expert faculty of Bengali Grammar and Geography, love to teach.

3 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post